খুনিদের সব ধরনের মদদ জিয়াউর রহমানই দিয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা; প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্পষ্টভাবে জড়িত ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, খুনিদের সব ধরনের মদদ জিয়াউর রহমানই দিয়েছিল।

আজ রোববার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় (ভার্চুয়াল) গণভবন প্রান্ত থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকারী বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তাদের কারা মদদ দিয়েছে? তাদের পেছনে কারা ছিল? আমার বাবার ক্যাবিনেটের মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক, তার উচ্চাভিলাস এবং তার সহযোগী জিয়াউর রহমান। যে (জিয়াউর রহমান) একজন মেজর ছিলো, তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমোশন দিয়ে মেজর বানিয়েছিলেন। সে এর সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিলো, তা স্পষ্ট পাওয়া যায়। এই হত্যাকাণ্ডের পরে বিবিসিতে কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশিদ একটা ইন্টারভিউতে স্পষ্টতভাবে বলেন তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল। তার মদদে এই ঘটনা ঘটাতে তারা সক্ষম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর (শেখ মুজিবুর রহমান) হত্যাকারীদের বিচার না করার ইনডেমনিটি দিয়েছে। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করা সন্ত্রাসীদের বিচার না করার ইনডেমনিটি দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেই আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটিকে ভিসা দেয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আইন করে বন্ধ রেখেছে এবং পাকিস্তানি মদদদাতা আলবদর, রাজাকার, আল-শামসদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা করে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে।

কর্নেল বেগ জিয়াউর রহমানকে চিঠিতে যে নতুন কাজ দেয়ার কথা বলেছিল, তা ১৫ আগস্টের এই হত্যাকাণ্ডের অ্যাসাইনমেন্ট কি না- সে প্রশ্ন করেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চিরতরে নস্যাৎ করে দেয় খুনিরা।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে সেখানে সংবিধান মানা হয়নি। সেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম কিন্তু রাষ্ট্রপতি হননি, রাষ্ট্রপতি ঘোষিত করা হলো খন্দকার মোশতাক। আর খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বানালো সেনাপ্রধান। জিয়া যদি মোশতাকের সঙ্গে এই ষড়যন্ত্রে সম্পৃক্ত না থাকবে না থাকে তাহলে, কেন মোশতাক তাকেই বেছে নিবে সেনাপ্রধান হিসাবে? খুনিদের সব ধরনের মদদতো জিয়াউর রহমানই দিয়েছিলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মীর জাফরও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। সিরাজদৌলাকে হত্যা করতে মীর জাফরকে যারা ব্যবহার করেছে। মীর জাফর দুইমাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ঠিক মোশতাকও পারেনি। মোশতাককে হটিয়ে জিয়াউর রহমানই রাষ্ট্রপতি হয়েছিলো। যে নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলো রাষ্ট্রপতি হিসাবে।

১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের খুনিদের সহায়তা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া, রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। ব্যাংকক হয়ে তাদের লিবিয়াতে পাঠায়। সেখান থেকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হয়ে পুরস্কৃত করে। ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার হবে না তার সেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি আমাদের মামলা করারও অধিকার ছিলো না, বিচার চাওয়ারও অধিকার ছিলো না।

স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতির মেয়ে হয়েও নাম পরিচয় গোপন করে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে। আর খুনিরা বিভিন্ন দূতাবাসে আরাম-আয়েশে জীবন কাটিয়েছে। খুনিদের বিচার না করার ইনডেমনিটি দিয়েছিল জিয়াউর রহমান আর সন্ত্রাসীদের ইনডেমনিটি দিয়েছিল তার স্ত্রী খালেদা জিয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮০ সালের ১৬ আগস্ট লণ্ডনে এই হত্যার প্রতিবাদে একটি শোকসভা করি। সেই সময় ওখানে স্যার টমাস উইলিয়াম এবং নোবেল লরিয়েট শন ব্রাইটকে নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। সেই দিনই সেই তদন্ত কমিশনে ঘোষণা দেয়া হয়। প্রবাসী বাঙালিদের সহায়তায় এই কমিশনের প্রতিনিধি স্যার উইলিয়াম টমাসকে জাতির পিতার হত্যার তদন্ত করবার জন্য বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তিনি যখন ভিসা চান, তখন জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি। বৃটিশ অনেক এমপি আমাদের তখন সহযোগিতা করে। তিনি কিন্তু স্যার টমাস উইলিয়ামকে ভিসা দেন নাই। জিয়াউর রহমান কেন ভিসা দিলো না? কেন তদন্ত করতে দিলো না? এই প্রশ্নটাও থেকে যায়। কারণ খুনের সাথে জড়িত ছিলো বলেই সে ভয়ে, ভীত ছিলো। সেই জন্য এটার তদন্ত করতে দেয়নি। আর স্যার উইলিয়াম টমাস তখন কুইন্স কাউন্সিলের মেম্বার। তাকেও আসতে দেয়নি। ঠিক এভাবে তারা খুনিদের লালন-পালন করে গেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, উচ্চ আদালত সামরিক শাসনামলের অর্ডিন্যান্স বাতিল করে দেশকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করেছে। দেশের মানুষের মধ্যে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে এসেছে। দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা জাতির পিতার কাছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অঙ্গীকার।

আলোচনা সভাটি সঞ্চলনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। সূচনা বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কার্যনিবার্হী সদস্য খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে