নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে করোনা পরিস্থিতি আর বিবেচনায় নিতে চাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি আগামী রবিবার অথবা সোমবার জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। ঢাকা-১৮ আসনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন বাড়তি সময় নিচ্ছে না। এদিন সময় হাতে থাকার পরেও শূন্য থাকা অন্য তিন সংসদীয় আসনের নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠানেরও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
ক্ষমতাসীন দলও সব শূন্য আসনের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে দিয়েছে।
আর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না থাকলেও অক্টোবর থেকে ইসি শুরু করতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকারের ৩০০টির বেশি নির্বাচন।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২১ মার্চ দেশে সব ধরনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ওই দিন নির্বাচন কমিশন জানায়, ভাইরাসটির প্রকোপ থাকা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। নির্বাচন কমিশনের এই স্থগিতাদেশের কারণে সব প্রস্তুতি নিয়েও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ মার্চ। একই দিনে বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠানেরও তারিখ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এই দুটি নির্বাচনও স্থগিত করা হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিন ব্যাপক সমালোচনার মুখেও কমিশন ঢাকা-১০, বাগেরহাট-৪ ও গাইবান্ধা-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করে।
বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠানে সাধারণভাবে সংবিধান নির্ধারিত ৯০ দিনের সময়সীমা গত এপ্রিলেই শেষ হয়ে যায়। এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ১২৩-এর ৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে দৈবদুর্বিপাকের কারণে এই দুই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আরো ৯০ দিন সময় নেয় এবং সময় বাড়ানোর আর কোনো উপায় না থাকায় গত ১৪ জুলাই এই দুই আসনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করে।
বর্তমানে জাতীয় সংসদের পাঁচটি আসন শূন্য রয়েছে। গত ২ এপ্রিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুতে পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসন শূন্য হয়। গত ৬ মে আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শূন্য হয় ঢাকা-৫ (ডেমরা-দনিয়া-মাতুয়াইল) আসন। ১৩ জুন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে শূন্য হয় সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর) আসন। সর্বশেষ গত ১০ জুলাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হয় ঢাকা-১৮ (উত্তরা) আসন।
ঢাকা-৫ ও পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের সাধারণ সময়সীমা এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে। এই দুই আসনের নির্বাচনের জন্য বর্তমানে কমিশনের হাতে আছে দৈবদুর্বিপাকের বর্ধিত ৯০ দিন; যা যথাক্রমে আগামী ১ নভেম্বর এবং ২৮ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। আর ঢাকা-১৮ আসনের নির্বাচনের জন্য কমিশনের হাতে সাধারণ সময় আছে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ঢাকা-৫ আসন বাদ রেখেই আগামী রবিবার ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে।
কিন্তু ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের শূন্য পাঁচটি আসনেরই মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনও কি দ্রুত এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ভাবছে, এই প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী রবিবার কমিশনের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, গত সপ্তাহে ইসির সর্বশেষ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী অক্টোবর মাস থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন শুরু করা হবে আর নভেম্বর থেকে জাতীয় সংসদের শূন্য আসনগুলোর নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। এসব নির্বাচনের জন্য আর সময় ক্ষেপণ করা হবে না। তার আগেই সম্পন্ন করা হবে ঢাকা-১৮ ও পাবনা-৪ আসনের নির্বাচন। আর চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন এমন সময় করা হবে যাতে এই সিটির প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই নির্বাচিত নতুন মেয়র দায়িত্ব নিতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি ছাড়াও করোনার কারণে স্থানীয় সরকারের স্থগিত ১১৫টি নির্বাচন এবং অপসারণ, পদত্যাগ, মৃত্যু ও মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে নির্বাচন উপযোগী ১৮৭টি জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আসছে অক্টোবর থেকেই শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন বিলম্বিত করা হবে না। যথাসাধ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে।