সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে আবার রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রোববার বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। এর আয়োজন করে ‘এম সাইফুর রহমানের স্মৃতি পরিষদ’।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে ১২ বার বাজেট উপস্থাপন করেন। তিনি অর্থমন্ত্রী ছাড়া বাণিজ্য ও ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতি একদম নিচের দিকে যাচ্ছে, মানে ডাউন ওয়ার্ডস। আমি ছোট একটা ঘটনা বলতে চাই, আওয়ামী লীগের আমল বাকশালের আগে আগেই, যখন শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি। সেই সময়ে বাংলাদে্শের অর্থনীতি সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন ড. মোজাহেরুল হক। তিনি প্রধান অতিথি শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে সামনে রেখে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি তীব্র গতিতে রসাতলে যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আবার এখন এই কথা বলতে হয়- যে অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপরে দাঁড় করিয়ে জিয়াউর রহমান ও সাইফুর রহমান উপরে নিয়ে গিয়েছেন। সেটাকে এখন টেনে নিচের দিকে ওই রসাতলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেটা হচ্ছে আজকের সেই অনির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে। আজকে পরিকল্পিভাবে দেশের অর্থনীতি আবার রসাতলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) লক্ষ্য একটাই যে, টাকাও বানাও, দুর্নীতি করো, মেগা প্রজেক্ট করো, মেগা লুট করো। এরকম ঘটনা দেখা যায় না, বাংলাদেশ ব্যাংক হ্যাকড হয়ে গেলো। প্রায় ৮‘ম মিলিয়নস গেলো, কি হয়েছে? কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হয়েছে, কারো কোনো শাস্তি হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের স্টক মার্কেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার করে নিয়ে চলে গেলো। বড় বড় প্রতিবেদন এলো। সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারলেন না আগের অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব। বললেন, এদের হাত অনেক লম্বা- নাম বলা যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো একটা পর একটা লোপাট-সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা, চার হাজার কোটি টাকা পাঁচ হাজার কোটি টাকা..। এমনকি ওই সময়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব বললেন সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা এমন কোনো টাকা নয়।”
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেখুন একজন ব্যাংকের চেয়ারম্যান তিনি জনতার মঞ্চের নেতা ছিলেন, একটা নতুন ব্যাংকও তৈরি করেছিলেন, কয়েকদিন আগে দেখলাম যে, সেই ব্যাংকের এমডি কারাগারে। সেই ব্যাংকের থেকে তিনি এর মধ্যেও ২ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন। এই সমস্ত ঘটনা ঘটছে। আজকে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে রসাতলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
এম সাইফুর রহমানকে ‘বিপ্লবী সংস্কারক’ হিসেবে অভিহিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বলা যেতে পারে আসলে উনি একজন বিপ্লবী সংস্কারক ছিলেন। অনেক সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন যেটা খুব পপুলার ছিলো না। যে ভিএটি ইন্টুডিউশ করেছিলেন –এটা কিন্তু ওই সময় পপুলার ঘটনা ছিলো না। অনেক অর্থনীতিবিদও ওই সময়ে এর সমালোচনা করেছিলেন। এমনকি আমি বিখ্যাত পত্রিকা হলিডে হেডলাইন দেখেছি- সাইফুর রহমান একাই ধবংস করে দিচ্ছেন। কিন্তু তার ভবিষ্যত দৃষ্টি ও প্রজ্ঞা-মেধা প্রমাণ করেছে তিনি ডেসট্রয় করেননি, তিনি নির্মাণ করেছে। তিনি পরিবর্তনের বাংলাদেশ নির্মাণ করে গেছেন। তিনি একটা বাসকেট কেইসকে সাকসেসে নিয়ে এসছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা। আর তার সৈনিক ছিলেন সাইফুর রহমান সাহেব।
সাইফুর রহমানের কর্মকাণ্ড সংরক্ষণে একটা ফাউন্ডেশন গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি। বলেন, প্লিজ আমার একটা অনুরোধ সাইফুর রহমান সাহেবকে সিলেটের নেতা বানাবেন না। তিনি বাংলাদেশের নেতা এবং অর্থনীতির সফল অন্যতম নেতা বলতে পারেন। ম্যাক্রো ইকোনোমিক্সে এতো সাকসেস কোনো অর্থমনন্ত্রীর আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
মিলিনিয়ম ডেভেলমেন্টে সাবেক অর্থমন্ত্রীর ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাইফুর রহমান সাহেব এই দেশের অর্থনীতিতে, এদেশের রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন। এটা থেকে আমাদেরকে এবং আমাদের নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা নিতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাবেক যুবদল নেতা কাইয়ুম চৌধুরীর পরিচালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌর সভার চেয়ারম্যান জি কে গউছ, যুক্তরাজ্য বিএনপি শাখার সভাপতি এম এ মালেক এবং প্রয়াত নেতা সাইফুর রহমানের ছেলে সাবেক সাংসদ এম নাসের রহমান বক্তব্য রাখেন।