ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে দেশের বেকার পরিস্থিতি। গত মার্চ মাসে বেকারের শতকরা হার ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। করোনার প্রভাবে সেটি হুহু করে বেড়ে গিয়ে এপ্রিল-জুলাই পর্যন্ত (চার মাসে) এ হার দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশে। তবে সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা কমে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কোভিড-১৯ বাংলাদেশ: জীবিকার ওপর অভিঘাত ধারণা জরিপ ২০২০-এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে একটি গতিশীল শ্রমবাজার বিদ্যমান রয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত ক্রমান্বয়ে কেটে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে এ প্রতিবেদনটি। একনেক শেষে ব্রিফিংয়ে এটি তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ইয়ামিন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কোভিডের অভিঘাত সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও পড়েছে। এটি কতটা পড়েছে তা বের করতেই প্রথমবারের মতো এই ধারণা জরিপ পরিচালনা করেছে বিবিএস। এটা একটি ভালো উদ্যোগ।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, আমরা প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি। এই স্যাম্পল সাইজ জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। কেননা ৯০০ হলেই সেটি গ্রহণযোগ্য হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিন মজুরের সংখ্যা পুনরায় আগের সংখ্যার কাছাকাছি পৌঁছেছে। মার্চে দিনমজুরির সঙ্গে যুক্ত ছিল আট শতাংশ পরিবার। সেটি জুলাইয়ে কমে হয় চার শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে আবারও বেড়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। তবে কৃষি পরিবারের সংখ্যা অপরিবর্তিত ছিল। মার্চ ছিল ১০ শতাংশ এবং জুলাইয়ে ১০ শতাংশ। বেকারের সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখন তা আগের সংখ্যার কাছাকাছি পৌঁছেছে। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে যুক্ত হচ্ছে পরিবারগুলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবার (খানা) ভিত্তিক মাসিক আয় কমেছে ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত মার্চ মাসে যে পরিবার ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা মাসিক আয় করতো, সেই পরিবার গত আগস্ট মাসে আয় করেছে ১৫ হাজার ৪৯২ টাকা। এ সময়ের মধ্যে আয় কমেছে ৩ হাজার ৯৩৩ টাকা। চলমান কোভিড-১৯ সময়ে আনুমানিক ৫২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে তাদের খাদ্যদ্রব্য ভোগের পরিমাণ মার্চ মাসের তুলনায় কমিয়েছে। এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ পরিবার মাসিক আয় কমার কারণে খাদ্যদ্রব্য ভোগের পরিমাণ কমিয়েছে বলে জানিয়েছে।
জরিপের তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, শতকরা প্রায় ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে কোভিড-১৯ এর অভিঘাতে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে রিকশা, ভ্যান চালক ও দিনমজুররা অধিকমাত্রায় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ কালীন আর্থিক সংকট মোকাবেলায় প্রায় ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ পরিবার সরকারি সহায়তা পেয়েছে। আর সরকারি ত্রাণ গ্রহণকারী এ পরিবারগুলোর ৯৪ দশমিক ৪৪ শতাংশের আগস্ট মাসের এবং ৮২ দশমিক ৬৪ শতাংশের মার্চ মাসের আয় ছিল প্রায় ২০ হাজার টাকা। এতে দেখা যায় সরকারি ত্রাণ বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো পেয়েছে।
বিবিএস জানায়, দৈবচয়নের মাধ্যমে মোট দুই হাজার ৪০টি মোবাইল ফোন নম্বর নির্বাচন করা হয়েছে। গ্রামীণফোনের ৯৫০টি নম্বর থেকে ৫২৩ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। রবি থেকে ৬৫০ জনের মধ্যে জরিপে অংশ নেন ৩০৮ জন। বাংলালিংক থেকে ৪৩৭ জনের মধ্যে প্রকৃত উত্তরদাতা ১৩৭ জন এবং টেলিটকের ৪৮টি নাম্বারের মধ্যে ২১ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে উত্তরদাতার হার দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।