শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবচেয়ে কষ্টের বিষয় আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না, কলেজে যেতে পারছে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। তাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও আমরা চাচ্ছি, তাদের পড়াশোনাটা যাতে চলমান থাকে। আপনারা জানেন যে, আমরা পরীক্ষাগুলো নিতে পারছি না এসএসসি-এইচএসসি। তাদের টেস্ট পরীক্ষা, ক্লাসের পরীক্ষা, সেই সব পরীক্ষাগুলো নিয়ে তাদের রেজাল্ট দিয়ে… আপনারা দেখেছেন আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের প্রমোশনটা দিয়ে দেয়া হবে। তারা যেন পড়াশুনাটা অব্যাহত রাখতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে হাওরের বিস্ময় কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যহত রাখতে ডিজিটাল পদ্ধতি, টেলিভিশনে ক্লাস নেয়াসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলার দিকেও নজর দিতে হবে। খোলা বাতাসে থাকা, রোদে থাকা। করোনাভাইরাস দূর করার জন্য এটা একান্তভাবে প্রয়োজন। আপনারা সেটা মেনে চলবেন। আপনারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন যাতে এই করোনাভাইরাসে আর কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
তিনি বলেন, আগামী শীতে করোনা মহামারির প্রকোপ বাড়তে পারে। সেটা মাথায় রেখে সরকার জেলা হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করছে। করোনাভাইরাস আগামী শীতকালে বাড়তে পারে, সেটা মাথায় রেখে প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নির্মাণ থেকে শুরু করে অক্সিজেনের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।
করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে দুই হাজার চিকিৎসক, তিন হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি, টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের কাজ করা, জনগণের কল্যাণ করা।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বাংলাদেশে একটা সড়কের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি। নৌপথগুলো সচল করার ব্যবস্থা নিয়েছি। রেলপথ সংযোগ পুনরায় স্থাপন করে এবং আরও নতুন নতুন অঞ্চলে রেললাইন সম্প্রসারণ করে রেলে যোগাযোগের সুযোগটা বাড়াচ্ছি।
তিনি বলেন, যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে, মানুষের পণ্য পরিবহনের সুবিধা হবে। সেখানে মানুষের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বিতা ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর হাওরের বিস্ময় ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক দেখতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইশ! কবে যে যাব। এ সড়কে (দেখতে) কবে যে যাব! আমার মনটা পড়ে থাকল। এ সড়ক দিয়ে গাড়িতে কবে যাব! রাষ্ট্রপতিও চান আমি যেন সরাসরি যাই। আমি যাব। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এ সড়ক দেখতে যাব।
উল্লেখ্য, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি এখন আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এরইমধ্যে হাওরের নৈসর্গিক রূপ দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসছে মানুষ। বর্ষায় মাইলের পর মাইল বিস্তীর্ণ জলরাশি, বর্ষা শেষে জলকাদা আর শুকনো মৌসুমে ফসলি জমি। বর্ষায় নৌকা আর অন্য ঋতুতে পায়ে হাঁটা ছাড়া চলাচলের উপায় ছিল না হাওরবাসীর। যোগাযোগে এখানকার মানুষের কষ্ট লাঘবে বিশাল হাওরের মধ্যে এ সড়ক নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন ‘ভাটির শার্দুল’ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে কিশোরগঞ্জ জেলার তিন উপজেলার মধ্যে সারা বছর চলাচলের জন্য নির্মিত হয় হাওরের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক।
সড়কটি নির্মাণের ফলে শুধু হাওরবাসীর চলাচলের দুর্ভোগ দূর হয়েছে তা নয়, নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সড়ক ও জনপথ অধিদপফতর ৮৭৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করেছে।
হাওরের বুক চিরে চলে যাওয়া ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ অলওয়েদার সড়কে ৫৯০.৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসি গার্ডার, ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ২৬৯.৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে ২৬১.৮১ মিটার দীর্ঘ ভাতশালা সেতু, ১৭১.৯৬৪ মিটার ঢাকী সেতু ও ১৫৬.৭২ মিটার দীর্ঘ ছিলনী সেতু সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্ষায় ভাঙন থেকে সড়ক রক্ষায় ৭.৬০ লাখ বর্গমিটার সিসি ব্লক দিয়ে স্লোপ প্রটেকশনের কাজ করা হয়েছে।