যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব কি বাড়ছে?

ডেস্ক রিপোর্ট

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে স্টিফেন ই বিগান

আঞ্চলিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব কি বাড়ছে? মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগানের বাংলাদেশ সফরে এমন ইঙ্গিত দেখা গেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন৷

বাংলাদেশ সফরে এসে বিগান বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায় যুক্তরাষ্ট্র৷ এই ইস্যুতে তার দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলেও জানান তিনি৷ তিনি আরও বলেন, ইন্দো-প্যাসিফক অঞ্চল গড়তে বাংলাদেশই হবে কেন্দ্র৷

অতীতে ভারতকে কেন্দ্র করেই এই অঞ্চলে মার্কিন সম্পর্ক বিস্তৃত হয়েছে৷ তাহলে এখন নতুন কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো যে, বাংলাদেশকে সেই গুরুত্ব দিতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে মার্কিন সম্পর্ক বিস্তৃতির বেশ কয়েকটি নতুন কারণ সৃষ্টি হয়েছে-

১. বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বিস্তৃত হচ্ছে৷ করোনার মধ্যেও অর্থনীতি আবার চাঙা হচ্ছে৷

২. প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের খারাপ সম্পর্ক

৩. ভারতের অভ্যন্তরীণ হিন্দুত্ববাদী সংকট

৪. বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, ভারতের মাধ্যমে এই অঞ্চলে অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুরনো মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি৷ তবে নির্বাচনের আগে স্টিফেন ই বিগানের এই সফরের গুরুত্ব আছে৷ এখানে তারা নতুন বার্তা দিতে চাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি, ‘ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও নেপালের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে৷ পাকিস্তানের সঙ্গে তো কথাই নেই৷ তাই এই অঞ্চলে ভারতের মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখার চেয়ে সরাসরি যোগাযোগ রাখাকে হয়ত যুক্তরাষ্ট্র শ্রেয় মনে করছে৷’

তাছাড়া ভারত মোদি সরকারের নীতির কারণে অনেক সমস্যায় পড়ছে৷ বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ভারতকে ভাবমূর্তির সংকটে ফেলেছে আর পাশাপাশি তাদের অর্থনীতিও সংকটে পড়েছে৷

অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার বড় হচ্ছে৷ আর এই করোনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত অবস্থানেই আছে৷ প্রবৃদ্ধির যে আভাস পাওয় যাচ্ছে তাকে আশাব্যাঞ্জক বলেই মনে করেন ড. ইমতিয়াজ৷ ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্যও বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷

বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পেছনে চীনও একটি ‘বড় ফ্যাক্টর’ বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এই অধ্যাপক৷ তিনি বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার৷ চীনা বিনিয়োগ বাড়ছে, চীনের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে চীন-নীতি তাতে হয়ত তারা মনে করে, এখন বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও ফেরানো দরকার৷’

তবে সাধারণভাবে মার্কিন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে না৷ তাই এটাকে নীতির পরিবর্তন না বলে ফোকাসের কিছুটা পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জোনারেল (অব.) শহীদুল হক৷ তার মতে, বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র এখন অর্থনেতিক কারণেই গুরুত্ব দিচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি মধ্যবিত্ত বড় ভোক্তা গ্রুপ তৈরি হয়েছে ৷ বাজারও বড় হচ্ছে৷’

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ যে কেন্দ্র হবে এ নিয়ে মার্কিন মনোভাব এখনো স্পষ্ট নয়৷ এটা বুঝতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি৷

অন্যদিকে মিয়ানমার ভারত থেকে সাবমেরিন পাচ্ছে৷ তা বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অবস্থানের কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ভারত যদি বাংলাদেশকে বাইরে ঠেলে দিতে চায়, সেটা তাদের ব্যাপার৷ কিন্তু মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ যেখানে প্রায় প্রমাণিত, সেই দেশের কাছে সাবমেরিন বিক্রি করা গ্রহণযোগ্য নয়৷ এটা সমালোচিত হবে৷ গণহত্যার বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়বে৷ প্রশ্ন উঠবে, ১৯৭১ সালে ভারত কি তার স্বার্থের জন্য বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, না গণহত্যার বিরুদ্ধে ছিল?’

তবে এখানে মিয়ানমারে চীনের প্রভাব দুর্বল করার একটা ইচ্ছা ভারতের থাকতে পারে৷ আর ভারতের বড় ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে মিয়ানমারে৷ কিন্তু ভারত যতই চেষ্টা করুক, মিয়ানমারে চীনের প্রভাব কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক৷ তিনি মিয়ানমারে বাংলাদেশের সামরিক এটাশে হিসেবেও এক সময় দায়িত্ব পালন করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘মিয়ামারের সাথে চীনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক৷’

তবে তিনি মনে করেন, এতে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷ কারণ, ওই সাবমেরিনটি একটি পুরনো ট্রেনিং সাবমেরিন৷

দুজন বিশ্লেষকই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবেই বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসুক না কেন বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে নিজের স্বার্থ বিবেচনা করে, মাথা ঠান্ডা রেখে৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে