বনানী থেকে সেতু ভবন সরাতেই হবে: ডিএনসিসি মেয়র

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেয়র

নিয়মবর্হিভূতভাবে রাজধানীর মহাখালীর সেতু ভবন নির্মাণ করা হয়েছে মন্তব্য করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, বিজিএমইএ ভবন আমরা সরিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এটি একটি বিষফোঁড়া। সেতু ভবনও আমাদের জন্য বেদনাদায়ক একটি বিল্ডিং। এটিকে সরাতেই হবে। আজ না হয় কাল।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিন দিনব্যাপী গণপরিবহন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা রিপোর্টিং প্রশিক্ষণের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডিএনসিসি মেয়র।

নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরম বাংলাদেশের সদস্যদের জন্য এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি)।

আতিকুল ইসলাম বলেন, বনানী সড়ক সংলগ্ন খালি জায়গায় সম্পূর্ণ নিয়মবর্হিভূতভাবে সেতু ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু ভবনের পাশের ২০ ফুট রাস্তা। এই রাস্তায় এখনই লোড নিতে পারে না। যেখানে পূর্বাচলে ১০ লাখ লোকের বাস হবে। ওরা যদি ঢাকায় আসতে চায়, তখন কি অবস্থা হবে? তাই এটা ভাঙতেই হবে। এখানে কেন সেতু ভবন হলো সে বিষয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর কাছে আমি জানতে চেয়েছি। এখন আবার বনানী এলাকায় রাস্তার পাশে বড় বড় ভবন হচ্ছে। প্রয়োজনে আপনাদের (সাংবাদিক) নিয়ে আমি সেখানে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করবো। এখানে ভবন করা যাবে না।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি সংলগ্ন সেতু ভবনের ওই খালি জায়গায় গাছপালা ছিল। কংক্রিটে আচ্ছাদিত এ শহরের ওই গাছগুলো ‘অক্সিজেন হাব’ ছিল। কিন্তু সেতু কর্তৃপক্ষ সেখানকার গাছ কেটে এ ভবন তৈরি করায় এ এলাকার পরিবেশ এবং যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের সড়কের পাশে এমন একটি খালি জায়গা থাকাও খুবই জরুরি।

তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীকে সেতু ভবনের বিষয়ে আমি আপত্তি জানিয়েছি। সেতু ভবন বিজিএমইএ ভবনের মতো সমস্যার কারণ। সেহেতু বনানীতে সেতু ভবন থাকতে পারে না। সরাতেই হবে।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, বিল্ডিং করার জন্য অনেক জায়গা আছে। মূল সড়কে আর কোনো বিল্ডিং যাতে না করা হয়। এগুলো পরিকল্পনার ব্যাপার। পরিকল্পনাগুলো বাস্তবসম্মত ভাবে করতে হবে বলে জানান তিনি।

গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আতিকুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটির মাধ্যমে এ পরিস্থিতির উন্নতি করার দায়িত্ব এখন ঢাকার দুই মেয়রের উপর। দক্ষিণের মেয়র এ কমিটির আহ্বায়ক এবং আমি যুগ্ম-আহবায়ক হিসেবে কাজ করছি। আশা করি আমরা ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো।

নগরের নানা উন্নয়ন কার‌্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, সিটি করপোরেশনের দরজা সবার জন্য খোলা। যে কোনো প্রয়োজনে আপনারা আসবেন। সব ধরনের সহযোগিতা করবো। সবাইকে বুঝতে হবে এটা কারো একক নয়, সবার শহর।

রামপুরা থেকে কালাচাঁদপুরে পর্যন্ত ওয়াটারট্যাক্সি চলাচল করতে ৯টি ব্রিজ উঁচু করার উদ্যোগের কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, ডিএনসিসির ফুটওভার ব্রিজগুলোতে স্কেলেটার (চলন্ত সিঁড়ি) সংযুক্ত করা হবে। প্রাথমিকভাবে ৮টি ফুটওভার ব্রিজ স্কেলেরটার সুবিধার আওতায় আনা হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য ফুটওভার ব্রিজগুলোতেও স্কেলেটার সংযুক্ত করা হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। এ উন্নয়নকে টেকসই করতে সকল পেশাজীবীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করতে হবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে পেশাজীবীরা কাজ করতে সম্মত আছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমরা সহযোগী করবো এবং একসঙ্গে কাজ করবো।

সভাপতির বক্তৃতায় পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, ঢাকা শহরের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেসব সমস্যার সমাধানে সাংবাদিকরা ভূমিকা রাখতে পারে। সেজন্য পিআইবি থেকে সাংবাদিকদের নগর সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ প্রশিক্ষণ সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মতিন আব্দুল্লাহ, সহ-সভাপতি কামরুন্নাহার শোভা, সাধারণ সম্পাদক সোহেল মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল খান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসান ইমন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।

শেয়ার করুন