বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম সেই যুদ্ধে স্পষ্টতই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সেদিন আমাদেরকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ডাক দিয়েছিলেন। অর্থাৎ একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং বিজ্ঞানমনস্ক ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য ডাক দিয়েছিলেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, সমৃদ্ধি কীভাবে আসে? কোনো জাতি যদি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যাথার্থ্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে তার পক্ষে সমৃদ্ধি অর্জন করা কিছুতেই সম্ভব না। জাতির পিতা ১৯৭১ সালে জাতিসংঘের ভাষণে স্পষ্টভাবেই এই সমৃদ্ধির কথা বলেছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনার শুরুতেই তিনি বিজ্ঞান শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি বিজ্ঞান শিক্ষার কথা বলেছিলেন। সে সময় আমি ছাত্রসমাজের শিক্ষাকমিশনের সদস্য ছিলাম। সে হিসাবে বলতে পারি; আমরা যখন জাতির পিতার সাথে দেখা করেছিলাম তখন তিনি বলেছিলেন- তোমরা তোমাদের যে রিপোর্টটা তৈরি করবে ঐ রিপোর্টটি ড. কুদরত ই খোদা কমিশনের নিকট জমা দিবে এবং তিনি বলেছিলেন তোমার উন্নত দেশগুলো দেখো; সেখানকার শিশু-কিশোররা কিভাবে বেড়ে উঠছে, কিভাবে তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কী ব্যবহার হচ্ছে এগুলো তোমরা খোঁজ খবর নিয়ে সেগুলোর ভিত্তিতে রিপোর্টটা তৈরি করো। আমরা কিন্তু সেদিন এগুলো অনুসরণ করে একটি রিপোর্ট তৈরি করে ড. কুদরত ই খোদা কমিশনের নিকট পেশ করেছিলাম।
প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমরা স্পষ্টত বলতে চাই, পৃথিবীর যে অগ্রযাত্রা তার মূলেই রয়েছে বিজ্ঞান। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য হলো আমরা এখনও একটি একক শিক্ষানীতি গ্রহণ করতে পারিনি।আমি মনে করি, এটি আমাদের সকলেরই ব্যর্থতা। একটি একক শিক্ষানীতি গ্রহণে আমাদের সুযোগ ছিল কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি। এখন অবশ্য সরকারি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করে একটি জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি কিছু মাদ্রাসা (কওমি মাদ্রাসা) আধুনিক শিক্ষার বাহিরে রয়ে গেছে। কওমি মাদ্রাসায় বিজ্ঞান পড়ানো হয় না। সেখানে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমি তাদেরকে (কওমি মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ) অনুরোধ করব তারা যেন মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বলেন। পাশাপাশি সরকারকেও অনুরোধ করব ঐসব মাদ্রাসায় জাতীয় সঙ্গীত গাইতে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে যেন বাধ্য করা হয়। কেননা এর সাথে কোরআন ও হাদিসের কোনো সংঘর্ষ নেই। যদি থাকত তাহলে পৃথিবীর যেসব দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু হিসেবে বাস করছে তারা বিপদগ্রস্ত হতো।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, যারা মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ আছেন, বিশেষ করে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানসহ সকলের কাছে অনুরোধ করব আপনারা আপনাদের প্রতিষ্ঠানে দয়া করে বিজ্ঞান পড়ানোর ব্যবস্থা করুন। কারণ টেকনোলজি ও বিজ্ঞান না পড়ানো হলে আপনারা এগুতে পারবেন না। তখন আপনারা মান্ধাতার আমলের সাথে সংযুক্ত হয়ে থাকবেন।
মোকতাদির চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল জাতির উদ্দেশে একটি অপূর্ব ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের কথা বলেছেন। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলেছেন। ভাষণটিতে তিনি ধর্মান্ধতার কথা বলেছেন। পাকিস্তানি দোসররা যে সক্রিয় হয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সেই কথাও বলছেন। আমি দেখেছি অনেকেই ভাস্কর্যের বিষয়ে বলতে গিয়ে মুর্তি পূজার বিষয়ে যেসমস্ত হাদিস আছে এগুলোকে টেনে এনেছেন। মূর্তির বিরুদ্ধে কিন্তু কোনো হাদিস নেই। তবে মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে হাদিসে আছে। আমি যদি আমার ছবিতেও উপাসনা করি সেটাও কিন্তু শিরক হবে। সুতরাং সেটি কখোই করার কথা না। তাছাড়া ভাস্কর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে উদ্ধৃতি আছে। হযরত সুলাইমান আলাইহিসসালাম জীনদের দ্বারা বড় বড় ইমারত নির্মাণ করতেন, বড় বড় ভাস্কর্য তৈরি করতেন। অবশ্য কোনো কোনো অনুবাদক এটিকে বড় বড় মূর্তিও বলেছেন। কাজেই যারা এসব বুঝেও সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলছেন, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের অনেকেই পাকিস্তানের আইএসআই এবং মধ্যপ্রাচ্যের আইএস এর এজেন্ট।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ফাহিমা খাতুন, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার।