বঙ্গবন্ধু কাপ টি-টোয়েন্টি কাপ: স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন খুলনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চ্যাম্পিয়ন খুলনা

নাহিদুল ইসলাম শেষ বলটিকে ছক্কায় পরিণত করেও কোনো লাভ হলো না গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের। ৫ রানে হেরে যেতে হলো পুরো টুর্নামেন্টে দাপটের সঙ্গে খেলা দলটিকে। উল্টো জয় হলো অভিজ্ঞতার। চট্টগ্রামকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু কাপ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের শিরোপা জিতে নিলো জেমকন খুলনা।

শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিতে টস জিতে খুলনাকে ব্যাট করতে পাঠায় চট্টগ্রাম অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ৪৮ বলে ৭০ রানের ইনিংসের কল্যাণে ১৫৫ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায় খুলনা।

ফর্মে থাকা চট্টগ্রামের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য এটি খুব বড় ছিল না। কিন্তু খুলনার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপক্ষে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেটে ১৫০ রানের বেশি করতে পারেনি চট্টগ্রাম, খুলনা ম্যাচ জিতে নিয়েছে ৫ রানে।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৬ রান প্রয়োজন ছিল চট্টগ্রামের। প্রথম পাঁচ বলে কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেনি তারা, উল্টো হারায় দুইটি উইকেট। শেষ বলে ছক্কা হাঁকান নাহিদুল ইসলাম। কিন্তু এটি শুধুমাত্র পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কোনও কাজেই আসেনি।

১৫৬ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালোই করেছিলেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। শুভাগত হোমের করা দ্বিতীয় ওভারে মাত্র ২ রান হলেও, মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রথম ও তৃতীয় ওভার থেকে মোট ২১ রান তুলে নেন চট্টগ্রামের দুই ওপেনার। তবে ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই সৌম্যকে সোজা বোল্ড করে দেন শুভাগত, আউট হওয়ার আগে ১০ বলে ১২ রান করেন সৌম্য।

উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর চাপে পড়ে যায় চট্টগ্রাম। পরের ওভারেই আল আমিন হোসেনের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন অধিনায়ক মিঠুন (৫ বলে ৭)। শুরু থেকে ইতিবাচক ব্যাটিং করছিলেন লিটন। তিনি আউট হন দুর্ভাগ্যজনকভাবে। শহীদুল ইসলামের নিজের বোলিংয়েই দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রানআউটে কাটা পড়েন ২৩ বলে ২৩ রান করা লিটন।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে ডুবতে থাকা দলকে আশার আলো দেখান সৈকত আলি ও শামসুর রহমান শুভ। দুজন মিলে গড়েন ৩৪ বলে ৪৫ রানের জুটি। ইনিংসের প্রথম টাইম আউটের সময় চট্টগ্রামের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ৫১ রান। পরের ৪ ওভার থেকে সৈকত ও শামসুর মিলে তুলে নেন ৪২ রান। ফলে শেষ ৭ ওভারে বাকি থাকে ৬৩ রান। তখন ১৪তম ওভারে মাত্র ৩ রান দেন আলআমিন, চাপ বাড়ে চট্টগ্রামের।

ইনিংসের ১৫তম ওভারে ভাঙে শামসুর-সৈকত জুটি। হাসান মাহমুদের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লংঅনে শুভাগত হোমের হাতে ধরা পড়েন ২১ বলে ২৩ রান করা শামসুর। ম্যাচ জিততে সমীকরণ তখন ৩৪ বলে ৬০ রান। মনে হচ্ছিল, ম্যাচ চলে যাচ্ছে খুলনার দিকে। কিন্তু সেটি সহজেই মেনে নিতে রাজি ছিলেন সৈকত, সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান মোসাদ্দেক সৈকতকে। শেষ তিন ওভারে তাদের বাকি ছিল ৪০ রান।

শহীদুল ইসলামের করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দেন সৈকত, পরের পাঁচ বল থেকে আসে একটি করে সিঙ্গেল, সমীকরণ নেমে আসে ১২ বলে ২৯ রানে। ততক্ষণে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন সৈকত। হাসান মাহমুদ আসেন ১৯তম ওভার নিয়ে। দ্বিতীয় বলে মিসফিল্ডিংয়ে বাউন্ডারি ছেড়ে দেন শুভাগত, শেষ বলে ছক্কা মেরে দেন মোসাদ্দেক, সেই ওভারে আসে ১৩ রান।

ম্যাচের দুই ইনিংস মিলে ৩৯ ওভার শেষে শিরোপার সমীকরণ নেমে আসে ৬ বলে ১৬ রান। খুলনার পক্ষে এ দায়িত্ব বর্তায় শহীদুলের কাঁধে। প্রথম বলে মিড উইকেটে মেরে সিঙ্গেল নেন সৈকত। পরের বলে মিডঅফ-লংঅফের মাঝামাঝিতে রেখে দুই রান নিয়ে নেন মোসাদ্দেক। সমীকরণ দাঁড়ায় ৪ বলে ১৩ রানে।

লো ফুলটস পেয়েও তৃতীয় বলটি সীমানাছাড়া করতে পারেননি তিনি, আউট হয়ে যান লংঅনে থাকা শুভাগতর হাতে ধরা পড়ে। তার ব্যাট থেকে আসে ১৪ বলে ১৯ রান। পরের বলে হাফসেঞ্চুরিয়ান সৈকত আলিকে (৪৫ বলে ৫৩) সোজা বোল্ড করে দেন শহীদুল। মূলত তখনই নিশ্চিত হয়ে যায় খুলনার জয়। হ্যাটট্রিক বলে ১ রান নেন নাদিফ। শেষ বলে ছক্কা মেরে পরাজয়ের ব্যবধানটা ৫ রানে নামান নাহিদুল ইসলাম।

খুলনার পক্ষে বল হাতে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন শহীদুল। এছাড়া ১টি করে উইকেট যায় শুভাগত, আলআমিন ও হাসান মাহমুদের ঝুলিতে।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৫ রান সংগ্রহ করেছে জেমকন খুলনা। দলটির অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪৮ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৭০ রান করে অপরাজিত থাকেন।

চট্টগ্রামের বোলারদের মধ্যে নাহিদুল ইসলাম ২টি, শরিফুল ইসলাম ২টি, মোসাদ্দেক হোসেন ১টি ও মোস্তাফিজুর রহমান ১টি করে উইকেট শিকার করেন।

ইনিংসের প্রথম বলেই ফিরেন জহুরুল ইসলাম। নাহিদুলের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড-অফে মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ হয়েন তিনি। তৃতীয় ওভারে ইমরুলও নাহিদুলের শিকার হয়েছেন। লং অফে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ হন তিনি। ৮ বলে ৮ রান করেন ইমরুল।

জাকির হাসান দারুণ খেলছিলেন। দলীয় ৪৩ রানে মোসাদ্দেকের বলে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ হন তিনি। ২০ বলে ২৫ রান করেন তিনি। পরে ৪০ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আরিফুল হক। দলীয় ৮৩ রানে শরিফুলের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হন আরিফুল। ২৩ বল খেলে তিনি করেন ২১ রান।

১৬তম ওভারে লং লেগে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ হন শুভাগত হোম। ১২ বলে ১৫ রান করেন তিনি। পরে ওভারে রান আউট হন শামীম হোসেন। ১ বল খেলে কোনো রান করতে পারেননি। পরে মাশরাফি নেমে ৬ বলে ৫ রান করে মোস্তাফিজের শিকার হন। শেষ দিকে রিয়াদ ঝোড়ো ব্যাটিং করে দলকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ফল: ৫ রানে জয়ী জেমকন খুলনা।

জেমকন খুলনা: ১৫৫/৭ (২০ ওভার)

(জহুরুল ০, জাকির ২৫, ইমরুল ৮, আরিফুল ২১, মাহমুদউল্লাহ ৭০, শুভাগত ১৫, শামীম ০, মাশরাফি ৫, শহীদুল ১; নাহিদুল ২/১৯, শরিফুল ২/৩৩, রাকিবুল ০/১৯, মোসাদ্দেক ১/২০, মোস্তাফিজ ১/২৪, সৌম্য ০/৩৯)।

গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: ১৫০/৬ (২০ ওভার)

(লিটন ২৩, সৌম্য ১২, মিথুন ৭, সৈকত আলী ৫৩, শামসুর ২৩, মোসাদ্দেক ১৯, নাহিদুল ৬, নাদিফ ১; মাশরাফি ০/৪০, শুভাগত ১/৮, আল-আমিন হোসেন ১/১৯, হাসান মাহমুদ ১/৩০, আরিফুল ০/১৮, শহীদুল ২/৩৩)।

ম্যাচসেরা: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (জেমকন খুলনা)।

শেয়ার করুন