পৌরসভার প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৌরসভা নির্বাচন
ফাইল ছবি

বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, অভিযোগ ও ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। দেশের ২৪ পৌরসভায় সোমবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল ৪টায়। এখন চলছে গণনা।

ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটার। সারাদিন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রদান করেন ভোটাররা।

এবারই প্রথমবারের মতো পৌরসভা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ভোটাররা যেমন নতুন উদ্দীপনায় ভোট দিয়েছেন তেমনি অনেক স্থানে এই মেশিনে ভোট দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ভোটাররা।

পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় বিষয়টি বুঝে উঠতে না পেরে অনেকেই ভোট দিতে অধিক সময় নিয়েছেন। এতে বাইরে লাইনে অপেক্ষা করে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বাকি ভোটারদের। আবার অনেক কেন্দ্রে আঙুলের ছাপ না মেলাতেও বিপাকে পড়েন ভোটাররা।

এদিকে ঢাকার ধামরাইয়ে পৌরসভা নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু।

এছাড়া খুলনার চালনা পৌরসভা নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপির প্রার্থী আবুল খায়ের খান।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা প্রত্যেকটি বুথ দখলে নিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ভোটারদের নিয়ে ইভিএম মেশিনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার পর নিজেরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নৌকা প্রতীকে চাপ দিচ্ছেন।

অপরদিকে পাবনার চাটমোহর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের জোর করে বের করে বুথ দখলে নিয়ে ইভিএমে ভোট নেয়ার অভিযোগ করেন তারা।

এছাড়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রগুলোতে নৌকা ও কাউন্সিলরদের এজেন্ট থাকলেও বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি।

অভিযোগ ওঠে অনেক কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে আঙুলের ছাপ নেয়ার পর ভোটারদেরকে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদানে বাধ্য করা হচ্ছে।

পঞ্চগড়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলমগীরের গাড়ি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে পৌরসভা এলাকার ২নং ওয়ার্ডের কালেক্টরেট আদর্শ শিক্ষা নিকেতন ভোটকেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

প্রথম ধাপের নির্বাচনে পৌরসভাগুলোতে মোট ১ হাজার ১৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গত ২২ নভেম্বর প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। গাজীপুরের শ্রীপুরে একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যু হলে এই ধাপ থেকে পৌরসভাটির ভোট স্থাগিত করে ইসি।

২৪ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মেয়র পদে ৯৩, সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ২৬৫ ও সাধারণ ওয়ার্ড কমিশনার পদে ৮০১ জনসহ তিন পদে মোট ১ হাজার ১৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বর্তমানে দেশে ৩২৯টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে ২৮ ডিসেম্বর, পঞ্চগড় পৌরসভা, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, রংপুরের বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীর পুঠিয়া ও কাটাখালী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, কুষ্টিয়ার খোকসা, চুয়াডাঙ্গা, খুলনার চালনা, বরগুনার বেতাগী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরিশালের উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নেত্রকোনার মদন, মানিকগঞ্জ, ঢাকার ধামরাই, সুনামগঞ্জের দিরাই, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শেয়ার করুন