দীর্ঘদিন পর রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করলো বিএনপি। নানা চাপে থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন কর্মসূচি পালন করতে পেরে কিছুটা ফুরফুরে মেজাজে দলটির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে সভা-সমাবেশ করতে চাইলেও অনুমতি মিলছিল না। অবশেষে দুটি সমাবেশের অনুমতি পাওয়ায় আন্দোলন করার আশার আলো দেখছেন দলটির অনেক নেতাকর্মী।
বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, শেষ সময়ে এসে সরকারের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। যে কারণে তারা বিএনপিকে বাধ্য হয়ে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে। সরকারের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। এখন অনুমতি না দিলেও মাঠে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলেও অনেকে জানান।
অন্যদিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়াকে সরকারের দুর্বলতা বা নমনীয়ভাব বলে মানতে রাজি নন বিএনপির কোনো কোনো নেতা। তবে একটি বিষয়ে সবাই একমত, এমন কর্মসূচি পালন করার ফলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচিতে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপিকে কর্মসূচি করতে না দেয়া বা বাধা দেয়ার সুযোগ আর সরকারের নেই। কারণ তাদের সময় শেষ। আর আমাদেরও আর ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে আসছি। কিন্তু সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি। অবশেষে তারা দুটি সমাবেশ করার অনুমতি দিল। তবে এর বিশেষ কোনো রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটা কোনো রাজনৈতিক সূত্রে গাঁথা নয়।’
তবে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এমন কর্মসূচির বিকল্প নেই বলেও মনে করেন এই নেতা।
দীর্ঘ আড়াই বছর পর গত জুলাই মাসে নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা পেয়ে কারাগারে বন্দী দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে ওই সমাবেশ করেছিল বিএনপি। একই দাবিতে আরও অনেকবার আবেদন করেও সমাবেশের অনুমতি পায়নি দলটি।
এর আগে সবশেষ বিএনপি ঢাকায় সমাবেশ করেছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। এরপর নানা ইস্যুতে বেশ কয়েকবার সমাবেশের অনুমতি চাইলেও পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি মেলেনি।
এবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত শনিবার রাজধানীতে নয়াপল্টনে জনসভা করে বিএনপি। ডিএমপির পক্ষ থেকে আগের তুলনায় এবার সহজেই অনুমতি পায় দলটি। শান্তিপূর্ণ এই জনসভায় রাজধানী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর থেকেও বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢল নামে জনসভায়।
এমন সমাবেশ নেতাকর্মীদের মধ্যে কেমন প্রভাব ফেলছে- এমন প্রশ্নে বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘একবাক্যে বললে নেতাকর্মীরা মনে হয় জেগে উঠেছে। মানসিক শক্তি সবার বেড়ে গেছে। দল এবং কর্মীদের জন্য এটা পজিটিভ দিক। এটাকেই ধরে রেখেই আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে হবে।
একই ধরণের বক্তব্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ বিএনপির সভাপতি নিপুন রায়েরও।
গত জুলাইয়ে সমাবেশ মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ঘোষণা দিয়েছিলেন আর কোনো অনুমতি নিয়ে কর্মসূচি পালন করা হবে না। সামনের দিনগুলোতে এমন চিন্তা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকার যে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে, অধিকার হরণ করছে এটা দেশি বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার নজরে এসেছে। যে কারণে সরকারের উপর নানা ধরণের চাপ আছে। সরকার এজন্য বাধ্য হয়েছে অনুমতি দিতে। তবে আমরা আশা করি সামনের দিনগুলোতে সরকার আরো নমনীয় হতে বাধ্য হবে।’
সমাবেশের ফলে নেতাকর্মীরা দারুণভাবে উজ্জীবিত বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ জনসভার উপস্থিতি দেখে উদ্বেলিত। এটা আমাদের জন্য কাজে লাগবে।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নাজমুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়েছে। যে কারণে কর্মীদের ক্ষোভ থাকলেও দলের কর্মসূচিতে তারা স্বতস্ফূর্তভাবে উপস্থিত হয়ে জানিয়ে দিয়েছে সরকারের সময় শেষ। প্রত্যেকটি নেতাকর্মী আশার আলো দেখছে। দলকে এসব বুঝে সংগঠন গুছিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করতে হবে।’
সামগ্রিক বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অনেক দিন পর সুযোগ পেয়ে নেতাকর্মীরা ছুটে এসেছে। এটা বিএনপির বড় সমাবেশগুলোর একটি হয়েছে। দলের জন্য এটা ভালো হয়েছে।’