ঢাকা উত্তরে হচ্ছে নতুন ৩৬ পদচারী সেতু, ৮টিতে চলন্ত সিঁড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা উত্তরে হচ্ছে নতুন পদচারী সেতু
ঢাকা উত্তরে হচ্ছে নতুন পদচারী সেতু। ছবি : সংগৃহীত

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও পথচারীদের নিরাপদ রাস্তা পারাপারে ৩৬টি নতুন পদচারী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর মধ্যে আটটি পদচারী সেতুতে ১৬টি চলন্ত সিঁড়ি (এস্কেলেটর) স্থাপন করা হবে। এতে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

ডিএনসিসির এমন উদ্যোগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন পথচারীরা। তারা বলেন, ঢাকা শহরে সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। ট্রাফিক আইন না মেনে যত্রতত্র বাসে যাত্রী ওঠা-নামা করান চালকরা। যাত্রীরাও যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হন। এতে প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এখন ডিএনসিসির ৩৬টি পদচারী সেতু এবং চলন্ত সিঁড়ি চালু হলে রাস্তা পারাপারে শৃঙ্খলা ফিরবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ২০১৯ সালের মার্চে প্রগতি সরণিতে সড়ক দুর্ঘটনায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। ওই ঘটনায় পর নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদচারী সেতু এবং চলন্ত সিঁড়ি নির্মাণে প্রকল্প তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার এবং দুর্ঘটনা কমবে।

তিন বছর আগে বনানী ও বিমানবন্দর সড়কে দুটি পদচারী সেতুতে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন করা হয়েছিল। এখন এসব সিঁড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। নতুন যে আটটি পদচারী সেতুতে ১৬টি চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন করা হবে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে হবে- জানতে চাইলে আতিকুল ইসলাম বলেন, আগে ওই দুটি পদচারী সেতুতে যে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন করা হয়েছিল, সেগুলো বাইরের জন্য উপযোগী ছিল না। ফলে ধুলাবালি এবং বৃষ্টির পানিতে কিছু দিনের মধ্যেই তা নষ্ট হয়ে যায়। এখন যে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন করা হবে, সেগুলো ধুলাবালি এবং বৃষ্টির পানিতে তেমন সমস্যা হবে না। ঠিকাদারের মাধ্যমেই এসব সিঁড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।

ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল সূত্র জানায়, গত ৩ জানুয়ারি ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের’ প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৯ কোটি ২৩ লাখ সাত হাজার টাকা। ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনা অনুযায়ী নতুন করে কুড়িল চৌরাস্তা, উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরের জসিম উদদীন অ্যাভিনিউ, গরিবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউর লুবানা হাসপাতাল, গাউছুল আজম অ্যাভিনিউর পূর্ব অংশে, মাইলস্টোন কলেজ, সিরামিক রোডের বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, প্রশিকা ক্রসিং মিল্ক ভিটা রোড, মিরপুরের শিয়ালবাড়ী মোড়, মিরপুর সিরামিক রোডের পেট্রল পাম্পের পাশে, মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, পুলিশ স্টাফ কলেজ, নাবিস্কো ফ্যাক্টরির সামনে, বিজি প্রেস উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে প্রধান সড়ক, মহাখালী ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর অফিসের সামনে, মহাখালী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, বিমানবন্দর রোডের নেভাল হেড কোয়াটার সংলগ্ন, আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে, গুলশান-১ এর ভোলা মসজিদের পাশে, শুটিং ক্লাব, গুলশান-২ এর আজাদ মসজিদের সামনে, প্রগতি সরণির কোকা-কোলা মোড়, শাহজাদপুর কনফিডেন্স টাওয়ারের পাশে, মেরুল বাড্ডা বৌদ্ধ মন্দিরের পাশে, রামপুরা সেতু সংলগ্ন ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, টেকনিক্যাল ক্রসিং, মাজার রোড ইউরোপিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে, কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা সুপার মার্কেটের সামনে, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে, শ্যামলী ইন্টারসেকশন, সাতমসজিদ রোডের গ্রাফিক্স কলেজের পাশে, রিং রোডে আদাবর থানার পাশে, মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড, শিয়া মসজিদ ক্রসিং, সুচনা কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ও বসিলা রোডের বেড়িবাঁধ বাঁশবাড়ি সড়কে নতুন পদচারী সেতু নির্মাণ করা হবে।

এর মধ্যে কাকলী পদচারী সেতু, শাহীন কলেজ পদচারী সেতু, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল পদচারী সেতু, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ পদচারী সেতু, সিএমএইচ হাসপাতাল পদচারী সেতু, শ্যামলী ইন্টারসেকশন পদচারী সেতু, মহাখালী পদচারী সেতু (ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর সামনে) ও প্রগতি সরণি ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় পদচারী সেতুতে চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন করা হবে।

গত ১৮ জানুয়ারি মহাখালী ডিএনসিসির অঞ্চল-৩ এর সামনে দিয়ে সড়ক পার হচ্ছিলেন পথচারী খবিরুদ্দিন আহাদ (৫৬)। তিনি বলেন, সড়কে পদচারী সেতু, জেব্রা ক্রসিং নেই। তাই যেখান দিয়ে সুযোগ পান, সেখান দিয়েই রাস্তা পারাপার হন তিনি। ওই জায়গায় পদচারী সেতু নির্মাণ এবং চলন্ত সিঁড়ি স্থাপনের কথা জানতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন খবিরুদ্দিন আহাদ ।

গত ৩ জানুয়ারি ওই প্রকল্প অনুমোদন হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেয়নি সংস্থাটি। জানতে চাইলে ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদ গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী মাসের (ফেব্রুয়ারি) মধ্যেই এ প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগ দেয়া হবে। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। এ প্রকল্পের মধ্যে নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৫০টি নতুন যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, বিদ্যমান ৪৭টি পদচারী সেতু সংস্কার, ট্রাফিক সাইন স্থাপন, সড়ক, সড়ক মিডিয়ান ও ফুটপাত উন্নয়নের কথা রয়েছে।

শেয়ার করুন