নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে।
প্রত্যেকটি কেন্দ্রেই সকাল থেকে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর উৎসব আমেজে আজ সকাল ৮টা থেকে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে বলে বাসসকে জানিয়েছেন নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল।
নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো ও উৎসবমুখর রয়েছে। ভোটারদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১০ হাজার সদস্য কাজ করছেন।
বেশ কিছু ভোট কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের এমন অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উনার অভিযোগটি সঠিক নয়। এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। কোন কোন কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে তা জানালে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাসসকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচনে কোন ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না বলে তিনি জানান।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নিজ নিজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। ভোট দেয়ার পর উভয় প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে জনগণের দেয়া রায়কে মেনে নেয়ার কথা জানান। দু’জনই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন বলে জানান।
নির্বাচনী এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
এবারই প্রথম ভোট গ্রহণ পরিস্থিতির তথ্য তাৎক্ষণিক জানার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে দু’ঘণ্টা পরপর প্রয়োজনীয় সার্বিক তথ্য কমিশন সচিবালয়কে জানাবেন। কোনো কেন্দ্রে জাল ভোট বা সিল মারার ঘটনা ঘটলে বা তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে কমিশন। ভোট কেন্দ্রে কোনো অঘটন বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে কর্মকর্তারা এসএমএসের মাধ্যমে কমিশনকে জানাবেন। এক্ষেত্রে কমিশন ঢাকায় বসে এসব এসএমএসের তথ্য অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট কার্যক্রমের গতি-প্রকৃতি, ভোটার, প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের গতিবিধি এবং সর্বোপরি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনসহ সব কিছু সাধারণ পোশাকে ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করছেন ইসির নীরব পর্যবেক্ষকরা। ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম দেখলে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত এবং প্রয়োজনে তারা কমিশনকে ঘটনার তথ্য জানাচ্ছেন।
নির্বাচনের নিরাপত্তায় মাঠে টহল দিচ্ছেন কয়েক হাজার বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্য। আচরণবিধি দেখভাল করতে নির্বাচনী এলাকায় রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত বড় কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটায় স্থানীয় ভোটাররা স্বস্তিতে রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় এই সিটি কর্পোরেশনে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন ও নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। এ নগরীতে নতুন ভোটার ১ লাখ ১১ হাজার।
নির্বাচন উপলক্ষে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্র পাহারায় থাকছেন পুলিশ, আনসার ও আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে কয়েক হাজার সদস্য। কেন্দ্রের বাইরে ২৯ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৫৮টি টিম এবং পুলিশের ৫৭টি মোবাইল ও ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র পাহারায় ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাকি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপির মো. হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি)।
৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠিত। এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদে ৩৩৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৫৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৫৪ জন। এছাড়া সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডে ৮৪ নারী কাউন্সিলর নির্বাচন করছেন।
এ নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৮ হাজার ৭০৮ জন। এর মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ৪২৫ জন, প্রতিটি কক্ষে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ২ হাজার ৭৬১ জন এবং প্রতিটি কক্ষে দু’জন পোলিং অফিসার হিসেবে ৫ হাজার ৫২২ জন রয়েছেন।
এই সিটিতে ৬ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হচ্ছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিবেচনায় সিটির কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার সহায়তায় ভোটগ্রহণ করছে কমিশন।
নির্বাচন