কেউ দু’বেলা খেতে না পেয়ে ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে ঘোরে, আর কেউ খাবার শেষ করতে না পেরে উদ্বৃত্ত অংশ ছুড়ে মারে ডাস্টবিনে। এটাই আজকালের বাস্তবতা। আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুরোপুরি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার লড়াই শেষ হয়নি আজও। অথচ এই দেশেই প্রতি বছর এক কোটি টনের বেশি খাবার অপচয় হচ্ছে।
সম্প্রতি জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) এবং তাদের সহযোগী সংস্থা ডব্লিউআরএপি’র যৌথ উদ্যোগে তৈরি খাদ্য অপচয় সূচক প্রতিবেদন-২০২১ প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ৯৩ দশমিক ১ কোটি টন খাদ্য অপচয় করা হয়েছে। এর মধ্যে গৃহস্থালী থেকে নষ্ট হয়েছে ৬১ শতাংশ খাবার। ২৬ শতাংশ খাবার নষ্ট করেছে খাদ্য বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আর খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে নষ্ট হয়েছে বাকি ১৩ শতাংশ খাবার।
‘দ্য ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট ২০২১’ অনুসারে, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ খাবার তৈরি হয়েছে, তার ১৭ শতাংশই অপচয় করা হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি খাবার অপচয় হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ চীনে। সেখানে বার্ষিক গৃহস্থালী খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ ৯ কোটি ১৬ লাখ টন।
অবশ্য ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে ভারতকেই শীর্ষ খাদ্য অপচয়কারী দেশ দাবি করা হচ্ছে। তবে সেখানে প্রতি বছর গৃহস্থালী খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ ৬ কোটি ৮৭ লাখ টন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে বছরে পরিবারপ্রতি খাদ্য অপচয় হয় গড়ে ৬৫ কেজি। আর গৃহস্থালী থেকে দেশে প্রতি বছর মোট খাদ্য অপচয়ের পরিমাণ ১ কোটি ৬ লাখ টন।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ছাড়া বাংলাদেশের চেয়ে খাদ্য বেশি অপচয় করে পাকিস্তান। সেখানে এক বছরে দেড় কোটি টনেরও বেশি খাবার অপচয় হয়ে থাকে।
এ অঞ্চলে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানে মোট খাদ্য অপচয়ের হার বেশ কম। তবে দেশগুলোতে পরিবারপ্রতি খাদ্য অপচয়ের হার বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি।
ভিন্ন একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে বিশ্বে ৬৯ কোটি মানুষ অনাহারে ভুগেছে। করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে লকডাউনের সময় সেই অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও এত খাবার অপচয় হওয়া দুর্ভাগ্যজনক!