ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত রোববার হেফাজতে ইসলামের হরতাল চলাকালে দিনভর এবং গত শুক্রবার হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুরের ঘটনায় মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) পর্যন্ত থানায় ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সদর মডেল থানায় ৫টি ও আশুগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দায়েরকৃত ৭টি মামলার মধ্যে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২টি, আনসার-ভিডিপির কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১টি, ইউনির্ভাসিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলার ঘটনায় ১টি এবং শহরের মেড্ডা পীরবাড়ি এলাকায় হামলা ভাংচুরের ঘটনায় ১টি এবং আশুগঞ্জ টোলপ্লাজায় হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। মোট ৭টি মামলায় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এস.আই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। (মামলা নং-৪১ ও ৪২, তারিখঃ-২৭-০৩-২১ইং)। মামলা দুটিতে অজ্ঞাতনামা চার থেকে ৫ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে।
আনসার-ভিডিপির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আনসারের সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট শাহাদাত হোসেন বাদী হয়ে ১টি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৪৫ তারিখঃ-২৮-০৩-২১ইং)। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪থেকে ৫শ’ লোককে আসামি করা হয়েছে। ইউনির্ভাসিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলার ঘটনায় ইউনির্ভাসিটির রেজিষ্ট্রার খন্দকার এহসান হাবিব বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩শ’ লোককে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া পৌর এলাকার পশ্চিম মেড্ডা পীরবাড়ি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে হেফাজতকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের এস.আই মোসলেম উদ্দিন বাদী হয়ে পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা এক থেকে দেড় হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে।
আশুগঞ্জ টোলপ্লাজায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আশুগঞ্জ হাইয়ে সার্জেন্ট জহিরুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪ থেকে ৫শ’ লোকের বিরুদ্ধে একটি এবং আশুগঞ্জ টোলপ্লাজার দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়নাল আবেদীন অজ্ঞাতনামা ৪ থেকে ৫শ’ লোকের বিরুদ্ধে অপর মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে, গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ চলাকালে ১২ বিক্ষোভকারী নিহত এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) রইছ উদ্দিন সহ পুলিশের ৮০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
গত সোমবার পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসযজ্ঞ স্থাপনাগুলো সরজমিনে পরিদর্শন করেন। বেলা ১১টার দিকে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন।
এসময় তিনি বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ঘটনা তদন্ত করতে অতিরিক্ত ডিআইজিকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘আমি আমার এই বয়সে এই ধরনের হরতাল দেখিনি। হেফাজত নেতাদেরকে বলতে হবে তারা কেন রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা করলেন। এই ব্যাখ্যা তাদেরকেই দিতে হবে।’
তিনি বলেন, এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। তারা দানবের মতো আচরণ করেছে। এই ধরনের দানবীয় কার্যক্রমের দায়ভার হরতাল আহবানকারী সংগঠনকে হেফাজতকেই নিতে হবে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাণ্ডব চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কার্যক্রম কিংবা কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাখ্যা দিক কেন তারা কোনো ধরনের অ্যাকশনে যাননি।
এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুর রহিম বলেন, হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় এ পর্যন্ত সদর থানায় ৫টি মামলা হয়েছে। আরও মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অপরদিকে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ বলেন, হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে আশুগঞ্জ থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. রইছ উদ্দিন বলেন, তিনদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষের সময় তিনি সহ পুলিশের ৮০ সদস্য আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।