আওয়ামী লীগকে ‘আলমারী লীগ’ বলা লোকরাও এমপি, মন্ত্রী ও মেয়র!

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম
আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। ছবি : সংগৃহীত

মুজিববর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পিতা মুজিবের ছবি এবং ভাস্কর্যের প্রতি চরম অবমাননা আমাদের দেখতে হচ্ছে এবং হয়ত আরও দেখতে হবে। আদর্শ নয় উন্নয়নই এখন আমাদের মুখ্য। তার জন্য আদর্শিক সবকিছুকে বিসর্জন দিতে আমরা প্রস্তুত!

১৯৭৫-এর পর থেকেই মাঠে আছি। আমার বিভাগ চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৯টি আসনের সংসদ সদস্যদের ১৯৭৫ পরবর্তী এবং ১৯৯৫ পূর্ববর্তী,  ২০০১ পরবর্তী ২০০৮ নির্বাচনের আগে পরের ভূমিকা কি আমি বিশ্লেষণ করেছি। আমার বিবেচনায় উত্তরাধিকার সহ ২৩/২৪ জন মাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে যারা আমাদের পক্ষের সবসময়। আর বাকীদের দাগ খতিয়ান খুঁজে পাওয়া যাবে না। মন্ত্রী এমপি মেয়র সবার একই অবস্হা।

অন্য সব বিভাগের কথাও অল্প বিস্তর জানি। ১৯৭৫ পরবর্তীতে জীবন বাজী রেখে যারা প্রতিরোধ সংগ্রাম করেছেন, ১৯৭৫-৯৬ পর্যন্ত যারা প্রতিনিয়ত নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দলের জন্য কাজ করে সর্বশান্ত হয়েছেন তাদের ফসিলকে আজ মিউজিয়ামে রাখার সময় হয়েছে। কেননা আজ তাদের অধিকাংশই জীবন্মৃত। ২০০৯-এর পরেও বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবল্টু আর আওয়ামী লীগকে আলমারী লীগ বলা লোকরাও এমপি, মন্ত্রী, মেয়র এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে। তারাই আওয়ামী লীগকে আজকের এ জায়গায় এনেছে।

কার কারসাজিতে দলের দুর্দিনের মানুষরা নেত্রীর কাছে অযোগ্য এবং অর্বাচিনই রয়ে গেল আর নবাগত সুযোগ সন্ধানী হায়নারা হলো অত্যাধিক যোগ্য- তা আজ খোঁজ নেওয়ার সময় এসেছে। নেত্রীও দোষে-গুণেভরা একজন মানুষ; যিনি আমাদের সর্বশেষ পার্থিব আশ্রয়স্থল। ভেবে কুল পাই না ২০১৪ এবং ২০১৮’র নির্বাচনে সুবিধাবাদীদের বাদ দিয়ে দলের দুর্দিনের মানুষদের মনোনয়ন দিলে দলের কি ক্ষতি হতো? কি ক্ষতি হতো সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দলের পরীক্ষিত কর্মীদের বিবেচনা করলে।

দলের দুর্দিনের মুজিবাদর্শের সৈনিকরা কখনো বেইমানি করে নাই এবং করবে না। কিন্তু আজ তারা অসহায়, শক্তিহীন। যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কৈশোর এবং তারুণ্যের অনেক সময় ব্যয় করেছে তাদের অনেককে দলের এমপি, মন্ত্রী, মেয়র এবং কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে কুর্নিশ করার জ্বালা সত্যিই ভয়াবহ।

আদর্শিক রাজনীতিতে আপোষকামীতার কোনো স্থান নাই। জামায়েতে ইসলামী বা হেফাজতে ইসলাম কখনো আদর্শিকভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযাত্রী হতে পারে না। সর্বশেষ গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ তারই প্রমাণ। যে সমস্ত রাজনীতিবিদ এবং সামরিক/বেসামরিক আমলা হেফাজতকে আওয়ামী লীগের মিত্র বানানোর মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান পাকা করতে চেয়েছে এবং সফল হয়েছে তাদের হিসাব নেওয়ার সময় এসেছে।

বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে কখনো আপোষ করেন নাই। জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও তার সীমিত সময়ের মধ্যে একই পথ অবলম্বন করে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। তা না হলে পরবর্তী শত শত বর্ষেও হয়ত এ সুযোগ আর কেউ পাবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হয়ত অন্ধকারাচ্ছন্নই থেকে যাবে। সময় খুবই কম। আমাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে সফল হতে হবে। তা না হলে এখনই বঙ্গবন্ধুর ছবির এ অবস্থা হচ্ছে- নেত্রীর অবর্তমানে কী হবে তা ভাবতেও ভয় লাগে।

লেখক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার

 (লেখাটি লেখকের ফেসবুক আইডি থেকে সংগৃহীত)

শেয়ার করুন