শুভেন্দু অধিকারীর ভাষায়, মমতা খালেদা জিয়ার মতো বেগম। মমতার ভাষায়, শুভেন্দু অধিকারী মীরজাফর কালসাপ। পশ্চিমবঙ্গে চলমান বিধানসভা ভোটের প্রচারে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ বিজেপি এবং তৃণমূলের অন্যতম দুই মুখ এখন পরস্পরকে এইভাবেই নিশানা করছেন। শুধু তাই নয়, দুজনের মুখেই প্রাধন্য পাচ্ছে বাংলাদেশ।
মাস কয়েক আগে থেকেই তৃণমূল ‘জয় বাংলা’ গ্লোগানকে তৃণমূলের স্লোগান হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছে। এটা নিয়েও বিজেপি নেতা শুভেন্দু ছাড়েননি মমতাকে। শুভেন্দুর ভাষায়, জয় বাংলা হচ্ছে বাংলাদেশের স্লোগান। শেখ মুজিবুর রহমানের স্লোগান। এটা পশ্চিমবঙ্গে এনে পশ্চিম বাংলাদেশ বানাতে চাইছেন ‘মমতা বেগম’।
জনশ্রুতি রয়েছে, ২০১১ সালের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ঢালাও সরকারি উন্নয়মূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করার কারণে সংখ্যালঘুদের বড় একটি অংশ এখন সরাসরি মমতা বন্দ্যোাপাধ্যায় এবং তার দল তৃণমূলকে সমর্থন করে।
রাজনৈতিক মহল মনে করেন, সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জন করার কারণে বিজেপির নিশানায় পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে কারণেই তাদের নির্বাচনী প্রচারে মমতাকে কখনো বেগম কিংবা কখনো ‘পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিমবাংলাদেশ বানাবেন মমতা’ এই ধরণের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
একই ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তিস্তা ইস্যুতে বিজেপিকে একহাত নিচ্ছেন। বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য অধিকারকে উপেক্ষা করে তিনি তিস্তার পানি না দেওয়ার একরোখা মনোভাব নিয়ে রয়েছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত ভালো সম্পর্ক থাকলেও তিস্তার জল তিনি দেবেন না বলে সম্প্রতি শিলিগুড়ির সভা থেকে হুঙ্কার দিয়েছেন, সেটা নিয়েও বিজেপি মমতাকে আক্রমণ করেছে।
সোমবারও (৫ এপ্রিল) একইভাবে বাংলাদেশের বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোধ্যায়কে সরাসরি তুলনা করলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এদিন রাতে কলকাতার অদূরে হাওড়ার ডোমজুরে তারই সর্তীথ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বলেন, নন্দীগ্রামের যখন প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট হয়ে গিয়েছে তখন তিনি ঘর থেকে বের হলেন। আর বয়াল স্কুলের ভেতরে ঢুকে পড়লেন মাথায় বেগম খালেদা জিয়ার মতো হিজাব পরে।
তিনি আরো বলেন, নন্দীগ্রামে বেগমকে অনেক ভোটে হারিয়েছি। ২ তারিখে ফল বের হলে দেখবেন। তাকে কেন ভোট দেবেন মানুষ বলুন তো- এইভাবেই মমতাকে কঠিনভাবে আক্রমণও করেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের কাঁধে কাঁধ রেখে জমি রক্ষার লড়াই করেছেন শুভেন্দু-মমতা। ২০১১ সালে জমি আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ এবং ২০১৬ সালে পরপর দুই বার সরকার গঠন করেন। সেই সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী মন্ত্রী হিসেবেই শুধু ছিলেন না শুভেন্দু বরং অন্যতম প্রভাবশালী নেতাও ছিলেন।
গত বছরের শেষ দিকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। এরপরই তার আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতাকে যখন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তুলনা করে নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলছেন শুভেন্দু তখন মমতাও কম যাচ্ছন না। নির্বাচনী প্রচারে শুভেন্দুকে প্রকাশ্যেই মীরজাফর, কালসাপ বলে অখ্যায়িত করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির অনেকটাই নিম্মগামী। গঠনমূলক আক্রমণ থেকে সরে এসে শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা ব্যক্তিগত আক্রমণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন। যা আগামীর জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক বলেও মনে করেন তারা।