এক বছরের ব্যবধানে দুই মাস বেড়েছে দেশের মানুষের গড় আয়ু। ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশি পুরুষদের গড় আয়ু ছিল ৭১ বছর দুই মাস এবং নারীদের গড় আয়ু ছিল ৭৪ বছর পাঁচ মাস। এ বছর নারী-পুরুষ উভয়ের দুই মাস করেছে আয়ু বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বাংলাদেশে জনসংখ্যাও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ এ উঠে এসেছে এই তথ্য।
সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানের মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পরিসংখ্যান বিভাগের যুগ্ম পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, সারাদেশের দুই হাজার ১২টি নমুনা এলাকার ১২ লাখ ৮৫ হাজার ১৩ জন মানুষের তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারি ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮২ লাখ। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে নারীর তুলনায় পুরুষের জন্মহার কিছুটা বেড়েছে। দেশে বর্তমানে মোট পুরুষের সংখ্যা আট কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার আর নারীর সংখ্যা আট কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার।
আশরাফুল হক বলেন, ২০২০ সালের হিসাবে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৮ বছর, যা ২০১৯ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৬ বছর। দেশে গড় আয়ু ২০১৮ সালে ৭২ দশমিক ৩ বছর, ২০১৭ সালে ৭২ বছর এবং ২০১৬ সালে ৭১ দশমিক ৬ বছর। প্রত্যাশিত গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি। ২০২০ সালে পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু হচ্ছে ৭১ দশমিক ২ বছর। ২০১৯ সালে ছিল ৭১ দশমিক ১ বছর। ২০১৮ সালে ৭০ দশমিক ৮ বছর, ২০১৭ সালে ৭০ দশমিক ৬ বছর এবং ২০১৬ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৩ বছর।
অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০২০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রত্যাশিত গড় আয়ু হচ্ছে ৭৪ দশমিক ৫ বছর, ৭৪ দশমিক ২ বছর, ৭৩ দশমিক ৮ বছর, ৭৩ দশমিক ৫ বছর এবং ৭২ দশমিক ৯ বছর।
জরিপকালীন তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ১ দশমিক ৩০ জন হয়েছে। আগের বছর এ হার ছিল ১ দশমিক ৩২ জন। এর ৫৪ শতাংশ পল্লী এলাকায় আর ৪৬ শতাংশ শহরে।
প্রতিবেদেনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশে স্থূল জন্মহার ছিল (প্রতি হাজারে) ১৮ দশমিক ১ জন। আগের বছরও একই হার ছিল। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মহামারীর মধ্যে গত বছর প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে ৫ দশমিক ১ জন মারা গেছে। তার আগের বছরে এই হার ছিল ৪ দশমিক ৯ জন। অর্থাৎ গত বছরে আগের বছরের তুলনায় মৃত্যুহার কিছুটা বেড়েছে।
তবে শিশু মৃত্যুহার অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি হাজারে ২১টি শিশু মারা যাচ্ছে। আর মাতৃ মৃত্যুতে আরও কিছুটা উন্নতি হয়ে প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৬৩ জন হয়েছে। আগের বছরে এটা ছিল ১ দশমিক ৬৫ জন। বিয়ের গড় বয়স ২৪ দশমিক ২ মাস অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের বছরও একই হার ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনা এলাকায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। শহর এলাকায় ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার করে। অন্যদিকে গ্রামে ব্যবহার করে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ৭ বছর ও তদুর্ধ জনসংখ্যার শিক্ষার হার এখন ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৫ সালে এই হার ছিল ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ১৫ বছর ও তদুর্ধ জনসংখ্যার শিক্ষার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করছে। আগের বছর পর্যন্ত এই হার ছিল ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ। বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার। আগের বছর পর্যন্ত এই হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার।
এই সময় পর্যন্ত স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার। গত বছরও এই হার একই ছিল। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন প্রতি হাজারে প্রতিবন্ধী রয়েছে ৮ দশমিক ৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৯ দশমিক ৩ জন, আর নারী ৭ দশমিক ৬ জন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, ‘আমরা এখন জনসংখ্যাকে ভয় পাই না। কারণ মানুষ আমাদের সম্পদ। আরবদের তেল রয়েছে, আমাদের রয়েছে মানুষ।’তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি যেন পরিমিতির মধ্যে থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেন তিনি।
সাক্ষরতার হার, বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মো. ইয়ামিন চৌধুরী। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম, বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বক্তব্য দেন।