টানা চারদিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর আজ খুলেছে ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সাতদিনের বিধিনিষেধে আগের চারদিন রাজধানীর সড়কে মানুষের সংখ্যা কম হলেও আজ পঞ্চমদিন সকাল থেকে বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বেড়েছে পথচারী ও নানা প্রয়োজনে বের হওয়া নগরবাসীর চলাচলও। কোনো কোনো চেকপোস্টে যানবাহনের দীর্ঘ সারিও দেখা গেছে।
এদিকে, করোনার সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছেন পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। বিধিনিষেধের শুরু থেকেই বিভিন্ন জায়গায় টহল দিতে দেখা গেছে তাদের। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্টে চালানো হচ্ছে তল্লাশি।
সোমবার (৫ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কলেজ গেট, ফার্মগেট, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, কাকরাইল, বাড্ডা ও মতিঝিলে দেখা যায়, এসব এলাকায় মানুষের চাপ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বিভিন্ন যানবাহনের চাপ। ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি বের হওয়ায় চেকপোস্টে জট লেগে আছে।
গত চারদিনে রাজধানীর কোনো সিগন্যালেই অপেক্ষা করতে না হলেও আজ পঞ্চমদিনে প্রতিটি সিগন্যালেই ৪-৫ মিনিট করে যানবাহনগুলোকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কোনো কোনো সিগন্যালে প্রায় ৮ মিনিটের মতো অপেক্ষা করতে হয়।
মিরপুর-১ নম্বর সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আজ সকাল থেকে রাস্তায় মানুষের যে চাপ তা দেখে মনেই হবে না দেশে কঠোর লকডাউন চলছে। যারা বের হয়েছেন তারা হয়তো জরুরি প্রয়োজনেই বের হয়েছেন, তবে একসঙ্গে এত মানুষের চাপ প্রতিটি রাস্তায় হলে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে। মানুষের চলাচল যেমন বেড়েছে তেমন ব্যক্তিগত যানবাহনসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বেড়েছে। যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় সবাইকে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি সিগন্যালে ১০ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে। তবে আমরা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’
শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘আজ থেকে ব্যাংক খুলেছে, এ কারণে মানুষের চাপ গত চারদিনের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই বেশি। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ি ও অফিসের গাড়িও বেড়েছে। তবে যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই মাস্ক পরছেন। আগের তুলনায় স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা বেড়েছে। আর যারা বিনা কারণে বের হচ্ছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’
রাস্তায় যানবাহনের পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশকে সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে। মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় দায়িত্বরত অবস্থায় পল্লবী ট্রাফিক জোনের পরিদর্শক বিমল সাহা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে লকডাউন ভাঙার মানসিকতা নেই। যারা বাইরে আসছেন, তারা জরুরি সেবায় নিয়োজিত। তারপরও শুধু জরুরি সেবায় নিয়োজিত লেখা দেখলেই যে ছেড়ে দিচ্ছি তা নয়; আমরা প্রতিটি গাড়ি তল্লাশি করছি ও আরোহীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’
এ ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল মোড় ও গাবতলী চেকপোস্টে গাড়ির ব্যাপক জটলা দেখা যায়। এসব চেকপোস্টে প্রত্যেকটা গাড়ি থামানো হচ্ছে। অপ্রয়োজনে বের হওয়া গাড়িগুলোকে মামলাও দেয়া হচ্ছে।
বিধিনিষেধের শুরুতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযৌক্তিক কারণে বাইরে বের হওয়ায় রাজধানীতে প্রথমদিন ৫৫০ এবং দ্বিতীয় দিন ৩২০ জন, তৃতীয় দিনে ৬২১ জনকে এবং চতুর্থ দিনে ৬১৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের নির্দেশনা জারি করে সরকার। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে মাস্ক পরে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার কথাও বলা হয় নির্দেশনায়। তা ছাড়া চলমান বিধিনিষেধে বন্ধ আছে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস। ৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই কঠোর বিধিনিষেধ।