সদ্য সমাপ্ত হারারে টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে চারিদিকে গুঞ্জন, সাদা পোশাকের ক্রিকেট ছেড়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ তারকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ধারণা করা হয়েছিল, সেদিনের খেলা শেষে বিসিবি কর্তৃক সরবরাহকৃত ভিডিওবার্তায় হয়তো সেই ঘোষণাই দেবেন মাহমুদউল্লাহ।
কিন্তু সেই ভিডিওবার্তায় ছিল শুধুই ম্যাচ সম্পর্কিত কথাবার্তা, অবসর বিষয়ে টুঁ শব্দটিও করেননি রিয়াদ। এমনকি চতুর্থ দিনেও এ বিষয়ে মেলেনি কোনো সাড়াশব্দ। কিন্তু আজ (রোববার) ম্যাচের শেষ দিনের খেলা শুরুর আগে মাহমুদউল্লাহকে ‘গার্ড অব অনার’ দেন সতীর্থ ক্রিকেটাররা। তখনই মূলত নিশ্চয়তা মেলে, আজই শেষবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে খেলতে নামলেন ৩৫ বছর বয়সী এ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই ম্যাচ খেলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার মাধ্যমে নজিরবিহীন এক কীর্তির মালিক হয়ে গেলেন এ ডানহাতি মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান ও অফস্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ফাইফার (৫ উইকেট) ও শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি করা একমাত্র ক্রিকেটার তিনি।
২০০৯ সালের ৯ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে কিংসটাউন টেস্টে অভিষেক হয়েছিল মাহমুদউল্লাহর। সেই ম্যাচে দুই ইনিংসেই ৮ নম্বরে নামানো হয় তাকে। ব্যাট হাতে খেলেন ৯ ও ৮ রানের ইনিংস। তবে বল হাতে প্রথম ইনিংসে ৩ ও পরের ইনিংসে ৫ উইকেট নেন।
তখনকার সময়ে বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্ট অভিষেকে ৫ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি। শুধু তাই নয়, দুই ইনিংস মিলে ৮ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশের মাটিতে এক ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটাও নিজের করে নেন রিয়াদ।
অভিষেকের প্রায় ১২ বছর পর ২০২১ সালের ৭ জুলাই নিজের শেষ ম্যাচটি খেলতে নামেন মাহমুদউল্লাহ। দীর্ঘ ১৬ মাস পর জাতীয় টেস্ট দলে ফিরে ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পান সেই ৮ নম্বরে। যেমনটা তাকে নামানো হয়েছিল ২০০৯ সালের অভিষেক টেস্টে।
তবে এবার আর ব্যাট হাতে এক অঙ্কের স্কোরে ফেরেননি। বরং ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও রেখেছেন টেস্ট ক্রিকেটের ধৈর্য্য আর মনোসংযোগের চূড়ান্ত ছাপ। প্রথমে লিটন দাসকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে ১৩৮ ও পরে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে নবম উইকেটে রেকর্ডগড়া ১৯১ রানের জুটি।
দলীয় ১৩২ রানের মাথায় ষষ্ঠ উইকেটের পতনের পর ব্যাটিংয়ে নেমে শেষপর্যন্ত আর আউটই হননি মাহমুদউল্লাহ। তিনি নামার পর বাংলাদেশ দল পেয়েছে আরও ৩৩৬ রান। যেখানে মাহমুদউল্লাহর একার অবদান অপরাজিত ১৫০ রান। শেষ ম্যাচেই ক্যারিয়ারের সেরা ব্যাটিং ইনিংস খেললেন তিনি।
এখানেও রয়েছে কাকতাল। ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে নেয়া ৫১ রানে ৫ উইকেট এখনও পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে তার সেরা বোলিং ফিগার। আর শেষ ম্যাচে খেলা ১৫০ রানের অপরাজিত ইনিংসটিই হয়ে রইল ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। আর এ দুইয়ের যুগলবন্দীতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই প্রথম।
আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদউল্লাহসহ ৩৭ জন ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের চার্লস রাসেল আবার শেষ ম্যাচের দুই ইনিংসেই করেছেন সেঞ্চুরি। কিন্তু তাদের কেউই ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট নিতে পারেননি। প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট আর শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরিতে প্রথম ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে সর্বোচ্চ ৩২৫ রানের ইনিংস খেলেছেন অ্যান্ডি স্যান্ডহাম। এছাড়া ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিল পন্সফোর্ড (২৬৬), ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিমুর নার্স (২৫৮), শ্রীলঙ্কার অরভিন্দ ডি সিলভা (২০৬) ও জেসন গিলেস্পি (২০১*)।
এর বাইরে মাহমুদউল্লাহ ছাড়াও শেষ ম্যাচে দেড়শ বা তার বেশি রান করেছেন ইংল্যান্ডের জেফ্রি লেগি (১৯৬), ইংল্যান্ডের মরিস লেল্যান্ড (১৮৭), অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ চ্যাপেল (১৮৭) ও ভারতের বিজয় মারচেন্ট (১৫৪)। এ দশজনই নিজেদের শেষ ম্যাচে দেড়শ রানের বেশি করেছেন।
ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে ক্যারিয়ার শেষ করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সাদা পোশাকে খেলেছেন সবমিলিয়ে ঠিক ৫০টি টেস্ট। ব্যাট হাতে ৫ সেঞ্চুরি ও ১৬ ফিফটিতে ৩৩.৪৯ গড়ে ২৯১৪ রান করেছেন। আর বল হাতে একবার ফাইফারসহ নিয়েছেন মোট ৪৩ উইকেট। ফিল্ডার হিসেবে ধরেছেন ৩৮টি ক্যাচ। তার রয়েছে একটি স্ট্যাম্পিংও।