তুমুল আলোচনায় থাকা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নোটিশে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সুরক্ষা এবং ডিজিটাল কমার্স খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া কোম্পানিটির ব্যবসাপদ্ধতি এবং বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১৯ জুলাই) ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেলের কাছে এই ব্যাপারে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী ১ আগস্টের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে রোববার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে ‘কারণ দর্শানোর সুযোগ’ দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছিলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে তারা যে টাকা নিয়েছে, তা তারা কীভাবে ফেরত দেবে সে বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে।
সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, শুধু ইভ্যালি নয়, সার্বিকভাবে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বৈঠকে।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, ইভ্যালি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়েও যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করছে না। যেসব মার্চেন্টের কাছ থেকে পণ্য নেওয়া হয়েছিল, তাদেরও অর্থ পরিশোধ করছে না ইভ্যালি। এসব কার্যকলাপের ফলে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা এবং বিক্রেতার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ইভ্যালির কাছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছয়টি বিষয় জানতে চেয়েছে। বিষয়গুলো হলো-
১. গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের নিকট মোট ৪০৭ কোটি টাকা দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির কাছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা চলতি সম্পদ থাকার কারণ কী? বাকি টাকা ইভ্যালির কাছে আছে কি না। থাকলে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে, না থাকলে দিতে হবে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা।
২. ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ কত, গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের বিনিময়ে যে পণ্য দেওয়ার কথা, সেগুলোর বর্তমান অবস্থা কী এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
৩. ১৫ জুলাই পর্যন্ত মার্চেন্টদের নিকট দায়ের পরিমাণ কত এবং তা পরিশোধের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
৪. ব্যবসা শুরুর পর থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি কী টাকা নিয়েছে, মার্চেন্টদের কত অর্থ পরিশোধ করেছে এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ।
৫. ইভ্যালির ব্যবসাপদ্ধতি এবং বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা।
৬. ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা এবং ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো ব্যবসা পদ্ধতি বা কার্যক্রম ইভ্যালিতে এখনো আছে কি না, থাকলে কী—এসব বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।
ইভ্যালিসহ আরও কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ধরন এবং গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়েও দীর্ঘ সময় পরও পণ্য না দেওয়া, অর্থ ফেরত না দেওয়াসহ ক্রেতা ঠকানোর বিপুল অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা শুরু হয়েছে। ইভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।