কে মডেল-অভিনেত্রী আর কে নয়, বিজ্ঞপ্তি জারি

বিনোদন প্রতিবেদক

মৌ ও পিয়াসা
মৌ ও পিয়াসা। সংগৃহীত ছবি

হাতেগোনা কয়েকজন মডেল বা অভিনয়শিল্পী পরিচয়ধারীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমানে কাঠগড়ায় গোটা শিল্পী সমাজ। ইতোমধ্যে এমনই কয়েকজন পুলিশের জালে ধরা পড়েছে, যারা মডেল পরিচয়ের আড়ালে উচ্চবিত্তদের নানা কৌশলে ফাঁদে ফেলে নিজেদের আখের গোছাতেন। এছাড়া নিয়মিত মাদক গ্রহণও করতেন।

এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে টেলিভিশন তারকাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ। কাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা হবে আর কাকে নয়- এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র/বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সংগঠনটি।

শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিম স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তিগত পরিচয়, প্রভাব, কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্য, কিছু ক্ষেত্রে কপালের জোরে দু-একটি বিজ্ঞাপন বা নাটকে কাজ করলেই তাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা যায় কি না সেই ভাবনাটা জরুরি হয়ে উঠছে।’

‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেউ কোনো টাইম পাসিং সোশ্যাল প্লাটফর্মে, ফ্রেন্ডলি মেইড ভিডিওতে অভিনয় করেছে, মডেল হিসেবে হয়তো ছবি আছে বাসার পাশের কোনো টেইলরের দোকানে অথবা একটা দুটো বিলবোর্ডে, সেও সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেকে অ্যাক্টর বা মডেল দাবি করছে। অথচ মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী হয়ে ওঠার জন্য যে নিষ্ঠা, একাগ্রতা, জ্ঞান, দর্শন, প্রস্তুতি, সামাজিক ও পেশাদার দায়বদ্ধতা প্রয়োজন সে সবের কিছুই তার নেই।’

‘আবার হুট করে এসেও কেউ মডেল বা অভিনেতা হয়ে ওঠে না, তাও না। সেক্ষেত্রে শতভাগ একাগ্রতার সাথে নিজেকে তৈরি করতে হয় আরো ভালো কাজের জন্যে এবং শিল্পী হিসেবে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাবার জন্য। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংগঠন, সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন, অভিজ্ঞ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তার আগ্রহ ও নিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে গাইড করে, তার মধ্যে শিল্পী হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। কালচারাল অ্যাক্টিভিস্ট, বিনোদন জগতের স্টেক হোল্ডার, মডেল বা অভিনেত্রী তকমা নেবার বা দেবার আগে তার কাজ, কাজের প্রতি আগ্রহ, সামাজিক দায়বদ্ধতা, প্রস্তুতি প্রভৃতি বিষয় বিবেচ্য হওয়া জরুরি।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের প্রচুর অভিনেতা অভিনেত্রী, মডেল তাদের কাজ দিয়ে সম্মান অর্জন করেছেন, পরিবারের জন্য গর্ব হয়েছেন, পেয়েছেন মানুষের অকুন্ঠ ভালোবাসা, সামাজিক ও জাতীয় স্বীকৃতি। হয়েছেন কোটি মানুষের আদর্শ। কোথাও পুলিশি অভিযানে ধরপাকড় হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় হেডলাইন হয়, অমুক মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী গ্রেপ্তার; যা অবধারিতভাবে হয়ে ওঠে আকর্ষনীয় সংবাদ।’

‘এ ধরনের হেডলাইন; সর্বজন শ্রদ্ধেয়, প্রথিতযশা অভিনেতা অভিনেত্রী, মডেলসহ বিনোদন মাধ্যমে নিষ্ঠার সাথে কর্মরত সকলের জন্য সামাজিকভাবে অত্যন্ত বিব্রতকর এবং অসম্মানজনক হয়ে ওঠে। সময়ে সময়ে এই ধরনের খবরের ফলশ্রুতিতে যারা সিরিয়াসলি, প্রফেশনাল ইথিক্সসহ এই কাজটা করে, তাদের প্রায়ই আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে শুনতে হয়, ‘দেখলাম তোমাদের এক মডেল/অভিনেতা এই কুকর্ম করেছে’- এরকম শ্লেষাত্বক কথা।’

‘এই পেশার মানুষ সম্পর্কে এক ধরনের অনাস্থা, অসম্মান তৈরি হয় সমাজে। যা হয়ে উঠতে পারে অপ্রত্যাশিত সোস্যাল ট্যাবু। গণমাধ্যম কাকে অভিনেতা/অভিনেত্রী বা মডেল বলবে, তার উপরই নির্ভর করে এই পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না? এত এত সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, নানান প্রতিকূলতার মধ্যে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া স্ট্রাগলার এবং ভবিষ্যতে বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে নিজের প্রতিভার সাক্ষর রাখতে উদগ্রীব নতুন প্রজন্মকে এই রকম বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন যেন না হতে হয় সেটা দায়িত্বশীলতার সাথে নিশ্চিত করার দায়িত্ব অনেকটাই আপনাদেরই।’

‘তাই গণমাধ্যম যখন হেডলাইন করবেন, সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো থেকে যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট কাজে তার নিষ্ঠা, তার অবদান প্রভৃতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে তারপর পেশা উল্লেখ করবেন, এটাই প্রত্যাশিত।’

শেয়ার করুন