আগামী ৭ আগস্ট থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত এক কোটি মানুষকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সপ্তাহব্যাপী এই টিকা কর্মসূচিতে গ্রাম পর্যায়ের মানুষজন, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি এবং নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
টিকা কর্মসূচি সহজ করার জন্য জানানো হয়েছে যে, অনলাইনে যারা নিবন্ধন করতে পারবেন না এমন ব্যক্তিরা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে কেন্দ্রেই নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন। ২৫ বছর বয়স থেকে টিকা দেওয়া হবে।
কীভাবে চালানো হবে কর্মসূচি?
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা বিষয়ে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, সারাদেশে চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন আছে। প্রতিটি ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডে একটি করে কেন্দ্র এবং তিনটি বুথ থাকবে। প্রতিটি বুথে দুশো করে মোট ছয়শজনকে প্রতিদিন টিকা দেওয়া হবে। কেন্দ্র হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের কাছাকাছি কোনো স্কুল, মাদ্রাসা অথবা যেখানে জায়গা আছে এরকম প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করার কথা বলেছি। এটা তারা স্থানীয়ভাবে নির্ধারণ করবেন। সারাদেশে এই কর্মসূচির বিষয়ে নির্দেশনা পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শিশুদের টিকা কর্মসূচিতে বাংলাদেশে ব্যাপক সফলতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এই কর্মসূচিতেও সেই মডেল অনুসরণ করা হবে।
বছরব্যাপী যেসব স্বাস্থ্যকর্মী শিশুদের টিকা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকেন তারা সহায়তা করবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, দেশে এখন সোয়া এক কোটি ডোজ টিকা মজুদ রয়েছে। সেগুলো হাতে নিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এই মাসের মধ্যেই আরও এক কোটি ডোজের চালান পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অনলাইনে নিবন্ধন ছাড়াও টিকা পাওয়া যাবে
দেশে ফেব্রুয়ারি ৭ তারিখ থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার গণকর্মসূচি শুরু হয়। এপর্যন্ত এক কোটি ৩৬ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
গণটিকাদান কর্মসূচির শুরু থেকে নিবন্ধন নিয়ে নানা জটিলতা, টিকার ঘাটতি এসব কারণে এক পর্যায়ে টিকা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়। অনেকেই টিকা নিতে আগ্রহীও ছিলেন না। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি এবং তা গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে যাওয়ার পর টিকার ব্যাপারে অনেকেরই আগ্রহ বেড়েছে।
ডা. ফ্লোরা জানিয়েছেন, অনলাইনে নিবন্ধন করে অথবা তা ছাড়াও টিকা নেওয়া যাবে। কর্মসূচি সহজ করার জন্য যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না তারা জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নিজের এলাকার টিকা কেন্দ্রে গেলে সেখানেই নিবন্ধন করে টিকা নেওয়া যাবে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও টিকা নেওয়া যাবে।
তবে সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, ‘এখনো পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে টিকা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু ধরুন কোনো কেন্দ্রে ইন্টারনেট সংযোগ বা বিদ্যুৎ চলে গেল, এরকম সময় টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের যাতে ফেরত যেতে না হয় সেজন্য স্থানীয়ভাবে কর্মকর্তারা ঠিক করবেন কীভাবে তা দেয়া যায়।’
যারা ইতিমধ্যেই অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন কিন্তু তারিখসহ এসএমএস পাননি তারাও সরাসরি নিজের এলাকার কোনো কেন্দ্রে টিকা কার্ডটি নিয়ে গেলেই টিকা দিতে পারবেন।
তবে ডা. ফ্লোরা বলছেন, ‘সরকারের চেষ্টা থাকবে যতটা সম্ভব অনলাইনে নিবন্ধন নিশ্চিত করা, যাতে করে সুরক্ষা ওয়েবসাইটে সব তথ্য থাকে এবং দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সহজ হয়।’
বয়স্ক ব্যক্তি নারীদের অগ্রাধিকার
এই কর্মসূচি চলবে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত। তবে প্রথম দুই ঘণ্টা শুধু নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা টিকা পাবেন। বাকিদের পরে দেওয়া হবে, তবে সেসময় যদি কোনো বয়স্ক ব্যক্তি ও নারী টিকা নিতে আসেন তাদের ফেরানো হবে না।
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় কর্মকর্তাদের দরকার অনুযায়ী সময় ও স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবার কথা বলা হয়েছে।
‘ধরুন কোনো চরাঞ্চল থেকে কেউ আসবেন। তাদের পৌঁছানোর জন্য সময় লাগতে পারে। সেজন্য স্থানীয়ভাবে কর্মকর্তারা সময় বাড়ানো বা স্থান নির্ধারণ করতে পারবেন।’ –বিবিসি বাংলা