প্রায় দেড় বছর পর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আজ রোববার শুরু হয়েছে সশরীরে পাঠদান। প্রথম দিনে স্কুলগুলোর অভ্যন্তরে স্বাস্থ্যবিধি বেশ কড়াকড়িভাবে পালন হলেও বাইরে অভিভাবকদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। যা চোখ এড়ায়নি খোদ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিরও। তাই সন্তানদের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে অযথা ভিড় না করার পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী৷
যেসব প্রতিষ্ঠানে বেশি শিক্ষার্থীরা রয়েছে সেখানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে অভিভাবকদের অতিরিক্ত ভিড় নিয়ে বিরক্তিও প্রকাশ করেন দীপু মনি।
অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপনারা যদি এভাবে বাইরে ভিড় করেন, তাহলে সেটিও একটি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হবে। শিক্ষার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে চলে যাওয়া ভালো। আর যদি চলে যেতে না পারেন, তাহলেও যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরে দূরে থাকেন।
এদিকে দীর্ঘদিন পর বন্ধুকে কাছে পেয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে আশপাশের পার্কে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগ আছে অনেকের মধ্যে। কারণ খোশগল্পে মেতে ওঠা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ব্যাপারে উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে।
বাহাদুর শাহ পার্কে ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুলের অনেক শিক্ষার্থীকে দেখা গেছে, জটলা করে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। অনেকে আবার সিগারেট ফুঁকছে! তবে কারো মুখে মাস্কের দেখা মেলেনি।
কাছে গিয়ে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ঢাকা টাইমসকে বলে, অনেক দিন পর বন্ধুদের দেখা পাইলাম, তাই একটু আলাপ করতেছি। কয়দিন পর পড়াশোনার চাপ শুরু হলে তখন আর এমন আড্ডা দেখতে পাবেন না।
এদিকে অভিভাবকদেরও কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলছেন। কারণ অনেকে সন্তানকে স্কুলে রেখে ফটকের সামনে পুরো সময় অবস্থান করছেন। এতে করে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা তাদের মাঝেও।
বিশেষ করে কয়েক শিফটে যেসব প্রতিষ্ঠান চলে সেখানে এক শিফটের শিক্ষার্থী বের হওয়ার সময় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনেকটা ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায় অভিভাবকদের মধ্যে। কে কার আগে নিজের সন্তানকে কাছে নেবেন তা নিয়ে রীতিমত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
অবশ্য এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষেরও দায় দেখছেন কেউ কেউ৷ নাজমুন নাহার নামের একজন অভিভাবক বলেন, ‘শিক্ষকরা যদি একেক সেকশনের বাচ্চাদের একেকবার বের হতে দেন তাহলে ভালো হবে৷ এক শাখার শিক্ষার্থীরা যখন বের হবে তখন তাদের অভিভাবকরা স্কুলের ভেতরে চলে যাবেন। তাহলে ভিড় কমানো যাবে।’ নাজমুন নাহারের সন্তান লক্ষ্মীবাজারের একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী৷
আজিমপুরে একটি স্কুল পরিদর্শনকালে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আমরা আজকে এখানে এসেছি জানিয়ে। আমরা প্রায়ই জানিয়ে, না জানিয়ে সব জায়গায় যাব। কোথাও যদি অবহেলার কারণে কোনো নিয়মের ব্যত্যয় দেখি, তাহলে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবেন শিক্ষক-কর্মকর্তা বা আমার অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হোন, যাদের এটি দেখভাল করার কথা ছিল, কিংবা যারা এটা দেখছেন তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যারা পরিদর্শনে যাবেন তাদেরকে বলে দেওয়া আছে, আনাচে-কানাচে খুঁজে দেখতে হবে, কোথাও কোনো ময়লা রয়েছে কি না। যত ভালো করা সম্ভব হয় আমরা সেটি করব। যাতে আমাদের কোনো অভিভাবক, শিক্ষার্থী বা শিক্ষক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে না থাকেন।’
অবশ্য প্রথম দিনে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে তৎপরতা ও আগ্রহ দেখে খুশি সরকার। প্রতিটি দিনই এভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘এটা শুরু। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’
স্কুলগুলোতে অভিভাবকদের জটলা না পাকানোর অনুরোধ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে হাত ধরে দিয়ে স্কুলে দিয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে তারা যেন স্কুলগুলোর সামনে জটলা না করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।’
এ বিষয়ে ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা হক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, ভেতরে যাতে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছি। বাইরের বিষয়টি দেখভাল করা দুরূহ। তারপরও আমাদের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কড়া নজরদারি করবো।’
সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার নিলু মৃধা বলেন, ‘অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকবেই। তারপরও সন্তানদের সুরক্ষার কথা তাদেরই বেশি ভাবতে হবে। কারণ সন্তানরা বেশি সময় তাদের কাছেই থাকে।