টানটান উত্তেজনার মধ্যে দলে মহাসচিব পদে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুকে নিয়োগ দিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। আজ শনিবার বিকালে এই নিয়োগ দেন তিনি। জাপা চেয়ারম্যান নিজেই সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মৃত্যুর পর তিন দিনের শোক পালনের মধ্যেই এই পদে নতুন কে আসছেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় দলের ভেতরে বাইরে। একাধিক প্রভাবশালী নেতা মহাসচিব হওয়ার জন্য জোর চেষ্টাও চালান। অতীতের মতো একক ক্ষমতাবলে না করে আলোচনার ভিত্তিতে মহাসচিব নিয়োগ দিতে চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।
জানা গেছে, পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের আনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেন। সবাই মহাসচিব পদে নিয়োগের ভার তার ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি মহাসচিব হিসেবে চুন্নুকে বেছে নেন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব করার জন্য জোরালোভাবে সুপারিশ করেন।
নতুন মহাসচিব হওয়ার আলোচনায় ছিল অন্তত এক ডজন নেতার নাম। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা ছিলেন- কো চেয়ারম্যান ও সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব সাইদুর রহমান টেপা।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত শনিবার মারা যান জাতীয় পার্টির মহাসচিব, সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।
কে এই মুজিবুল হক চুন্নু
মুজিবুল হক চুন্নু ১৯৫৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। ১৯৭২ সালে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ১৯৭৯-৮০ সালে অনার্স ও ১৯৮০-৮১ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
চুন্নু ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মহাজোট প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন।
এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ৬২ হাজার ৯১৮ ভোট পেয়ে তিনি বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মহাজোট থেকে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মুজিবুল হক চুন্নু ১৯৮৭-১৯৮৮ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐক্যমতের সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
মুজিবুল হকের স্ত্রী রোকসানা কাদের সরকারের অতিরিক্ত সচিব। তার বড় ছেলে মো. জিয়াউল হক নিলয় ব্যারিস্টার এট’ল (লিংকন্স ইন, লন্ডন) এবং ছোট ছেলে ইসরারুল হক কানাডায় অধ্যয়নরত।