চলমান বিশ্বকাপে নকআউট আজ ডেনমার্কের বিপক্ষে ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামছে উজ্জীবিত ক্রোয়েশিয়া। এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দল হিসেবে শতভাগ জয় নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। ডেনমার্কের বিপক্ষে শেষ ১৬’র লড়াইয়ে তাই ক্রোয়েটদেরই সুস্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে ধরা হচ্ছে। ডেনসরাও অবশ্য বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত তাদের বাজে ইমেজকে পেছনে ফেলে বিস্ময়কর কিছু করে দেখাতে পুরোপুরি প্রস্তুত।
নিজনি নোভগ্রাদের এই স্টেডিয়ামেই গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ক্রোয়েশিয়া। ড্যানিশদের পরাজিত করতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে স্পেন বনাম রাশিয়ার মধ্যকার বিজয়ী দলকে। অভিজ্ঞ প্লেমেকার লুকা মড্রিচের নেতৃত্বে ক্রোয়েশিয়া গ্রুপ পর্বে নাইজেরিয়া ও আইসল্যান্ডকে পরাজিত করে ডি’গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবেই নক আউট পর্বে উঠেছে। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলেছিল ক্রোয়েটরা। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত সেরা পারফরমেন্সকে তাই এবার টপকে যেতে চায় মড্রিচ বাহিনী। ১৯৯৮ সালে নেদারল্যান্ডকে ২-১ গোলে গোলে পরাজিত করে ক্রোয়েশিয়া তৃতীয় স্থান লাভ করেছিল। ডিফেন্ডার ডেজান লোভরেন বলেছেন, ‘তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর। আমার মনে আছে, ক্রোয়েশিয়া যখন গোল দিয়েছিল তখন বাড়িতে আমার মা কি করেছিল। এবার আমাদের সামনে সুযোগ আছে সেই ফলকেও টপকে যাওয়ার, তবে সে জন্য ভাগ্যের প্রয়োজন। পরের রাউন্ডে আমাদের প্রতিপক্ষ বেশ কঠিন, ম্যাচগুলো আসলেই কঠিন হবে।’
তবে দলের আরেক তারকা ইভান রাকিটিচ মনে করেন, ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ স্বপ্ন ডেনমার্ক ও ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের কাছে শেষ হয়ে যেতে পারে। ডেনমার্কের টটেনহ্যাম তারকা এরিকসেন ফ্রান্সের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র হওয়া ম্যাচটিতে ছিলেন দারুণ ফর্মে। যদিও এই ম্যাচে ড্র করায় তার দল নকআউট পর্বে উত্তীর্ণ হয়। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করা ম্যাচটিতে তিনি দারুণ একটি গোল করেছিলেন। রাকিটিচ বিশ্বাস করেন, মধ্যমাঠে এরিকসেনই দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। সে জন্য ক্রোয়েশিয়াকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
রাকিটিচ বলেন, ‘তারা বেশ সংঘবদ্ধ দল। তারা জানে প্রতিপক্ষকে কিভাবে থামিয়ে দিতে হবে। প্রতিপক্ষকে তারা খুব কমই গোলের সুযোগ দিয়েছে। আক্রমণ ভাগেও তারা বেশ বিপদজনক দল। তাদের দলে আছে ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। এই মুহূর্তে ইউরোপ ও বিশে^র অন্যতম সেরা প্লে-মেকার সে। আমরা যদি প্রতি বছর বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেতাম তবে খেলোয়াড়রা মানসিকভাবেও শক্ত থাকতো। এটা এমনই একটা আসর যে, এখানে সবকিছুই সম্ভব। ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো খুঁজলে দেখা যাবে, কত মানুষ বিশ্বকাপ উপভোগ করছে। দলগুলোর তাদের সমর্থকদের নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত। প্রায় এক মাস যাবত আমরা সবাই পরিবারের বাইরে। ক্রোয়েশিয়ার জয়ের জন্য আমরা এসবই আমলে নিতে চাই।’
রাশিয়ায় এ পর্যন্ত মাত্র একটি ম্যাচে জয়ী হয়েছে ডেনমার্ক। গ্রুপ পর্বে তারা পেরুকে ১-০ গোলে পরাজিত করেছিল। ড্যানিশ মিডফিল্ডার থমাস ডেলানে বিশ^াস করেন, এরিকসেন তার শক্তিশালী আক্রমণাত্মক মনোভাব দিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে পরাস্ত করতে পারবে। বিশেষ করে শক্তিশালী ফ্রান্সের বিপক্ষে এক পয়েন্ট অর্জণ করাতে দল আরো বেশী উজ্জীবিত অবস্থায় আছে বলেই তাদের বিশ^াস।
আইসল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক গোলে ক্রোয়েশিয়াকে জয় উপহার দিয়েছিলেন ইভান পেরিসিচ। কালকের ম্যাচেও ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র তিনিই হতে পারেন।
এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো ক্রোয়েশিয়া ও ডেনমার্ক একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে। তাদের হেড-টু-হেড রেকর্ড একেবারেই সমান, দুটি করে জয় ও একটিতে ড্র। এর আগে বড় কোন টুর্নামেন্টে একবারই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ইউরোতে গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়া ৩-০ গোলে জয়ী হয়েছিল।
এবারের আসরে ক্রোয়েশিয়ার ৭ গোলের মধ্যে ৬টিই এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে। অন্যদিকে ডেনমার্ক তাদের শেষ তিন ম্যাচে মাত্র ২টি গোল করেছে।
খেলা