স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, সম্পূর্ণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। মাদক সম্পূর্ণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে চলমান মাদক বিরোধী অভিযান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, বিচারবহির্ভূত হত্যকান্ড, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক বিক্রেতাদের সহযোগিতা ও মাদক বিক্রির সঙ্গে পুলিশের যেসব সদস্যের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। প্রমাণের ভিত্তিতে সাসপেন্ড হচ্ছেন। ইতোমধ্যে ২-৩ জনকে কারান্তরীণও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্যও অপরাধ করলে পার পাচ্ছেন না। দেশের আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। সেখানে পুলিশ সদস্যরাও বাদ যাবেন না। তবে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পান সে জন্যই সময় লাগছে। বিভাগীয় তদন্তও চলছে। তদন্তে মাদকে জড়িত থাকার বিষয় প্রমাণ মিললে ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘পাঁচটি গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে যারা কমন পড়ছে তাদেরই ধরা হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। এ যুদ্ধে আমাদের জিততে হবে। সেজন্য সকলের সহযোগিতা দরকার।’
ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরাম নিহত হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, একরামের পরিবারের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। আর র্যাব সদস্যদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি তদন্তের অংশ। তদন্তে যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয় তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, দেশে কোন গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটছে না। আমরা কোন বিচারবহির্ভূত হত্যা করি না। আর যারা গুম হচ্ছেন সেগুলো আসলে গুম না। তাদেরকে ধরে সামনে আনা হচ্ছে, দেখা গেছে তারা হয় প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নয়তো ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে নিজেরাই গুম হয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য যা-যা করা দরকার তাই করা হয়েছে। তার আগের অসুস্থতার চিকিৎসা চলছে। তিনি নতুন কোনো অসুস্থতায় ভুগছেন না। সুতরাং তিনি গুরুতর অসুস্থ, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের এমন অভিযোগ সঠিক নয়। সরকারের পক্ষ থেকে তার পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলকোড অনুযায়ী যদি আরও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার থাকে তা গ্রহণ করা হবে। তাকে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। তিনি আর সেখানে যাবেন না। পরে আমরা সিএমএইচে নেয়ার কথা বলেছি, তিনি সেখানেও যাবেন না। সরকারি ব্যবস্থাপনার বাইরে তিনি অন্য কোথাও চিকিৎসা নিতে চাইলে সে ব্যবস্থা করা কঠিন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রীও অসুস্থবোধ করলে সিএমএইচে যান, সেখানেও যদি তিনি না যান, তবে অন্য কোথাও চিকিৎসার জন্য নেয়াটা কঠিন। তাকে যেসব ডাক্তারা সেবা দিয়ে থাকেন তারা সার্বক্ষণিক দেখছেন। প্রয়োজন হলে তারা আবার দেখবেন।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। আইনমন্ত্রীর অধীনে একটি কমিটি এ ব্যাপারে কাজ করছে। খুনিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্টে বিদেশ যাওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে নজরদারি রাখা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে কারো কাছে পাসপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও হামলায় জড়িতদের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ডাক না পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ সেখানে যায় না। ভিসি’র বাসভবনে হামলা-ভাংচুরের ফুটেজ দেখে ওই ঘটনায় জড়িতদের ধরা হচ্ছে।
ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত যাতে নির্ভুল হয় সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং যদি প্রয়োজন পড়ে বিচারিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতি সাইফুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন।
নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্ট