বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে শান্তিপুর্নভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। সোমবার সকাল ৮ টা থেকে মহানগরীর ১২৩ টি কেন্দ্রে’র ৭৫০টি বুথে মোট ২ লাখ ৪২ হাজার ১১৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধীকার প্রয়োগ করছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬জন পুরুষ ভোটার ও ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন নারী ভোটার রয়েছেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান করতে পারেন এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এবারের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থীত সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ (নৌকা) প্রতীক নিয়ে, বিএনপি’র মজিবুর রহমান সরোয়ার (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি (বহিষ্কৃত) ইকবাল হোসেন তাপস (লাঙ্গল), ইসলামি আন্দোলনের ওয়াহিদুর রহমান মাহবুব (হাত পাখা), সিপিবি’র এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ (কাস্তে), বাসদের প্রার্থী ডা. মনিষা চক্রবর্তী (মই) প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া সাধারন কাউন্সিলর প্রার্থী ৯১ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রার্থী রয়েছেন।
সকাল ৮টা ৫ মিনিেিট ১৯ নং ওয়ার্ডের সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন আওয়ামীলীগ সমর্থীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা খবর নিয়েছি সব জায়গায় সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে ভোট হচ্ছে। কয়েকটি কেন্দ্রে নারী ভোটারদের অনেক উপস্থিতি দেখা গেছে। এসময় তিনি নৌকা মার্কার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেন, বরিশালের মানুষ উন্নয়ন চায়। তাই উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করবে। নির্বাচনের ফলাফল বিপক্ষে গেলে মেনে নেবেন বলে জানিয়ে সেরনিয়াবাত সাদিক বলেন, যিনি জয়লাভ করবেন তাকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। সকাল ৯ টার দিকে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার ভোট দেন সৈয়দা মাজিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালড কেন্দ্রে।
এদিকে সকাল থেকেই ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে ভোটারদের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। এসময় ভোটারদের সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাড়িয়ে স্ব স্ব ভোটধীকার প্রয়োগ করতে দেখা যায়। এবারের নির্বাচনে ৪টি ওয়ার্ডে ১১টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন হচ্ছে। অনেকটা উৎসবমুখোর পরিবেশের মধ্যে এখানে সিটি নির্বাচন চলছে।
সহকারি রির্টানিং কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বাসস’কে জানান, শনিবার সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ১৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। আরো ৪ প্লাটুন রিজার্ভ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি র্যাব ও পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে র্যাবের ৩০টি টিম কাজ করছে ও ৪টি টিম রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ৪ হাজার ১৭২জন পুলিশ ও আনসার সদস্য কাজ করছে আজকের নির্বাচনে। তারা মোবাইল টিম কেন্দ্র, স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ বিভিন্ন ভাবে মাঠে রয়েছে। একইসাথে নির্বাচনে ১০জন বিচার বিভাগীয় (জুডিশিয়াল) হাকিম ও ৩০টি ওয়ার্ডে ৩০ জন জন নির্বাহী মেজিস্ট্রেট দ্বায়িত্ব পালন করছেন। আর অতিরিক্ত হিসাবে আরো ৮জন নির্বাহী মেজিস্ট্রেট রয়েছেন।
নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ডের সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ব্যবসায়ী আরিফুল হক ও জাকির হোসেন বাসস’কে জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বেশ প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ হচ্ছে এবারের সিটি নির্বাচন। তাই যার মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন হবে তাকেই ভোট দিবেন তারা। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা লুৎফর রহমান (৭০) জানান, ভোট কেন্দ্রে আসার পথে কোন সমস্যা বা কেউ বাঁধা দেয়নি। শান্তিপূর্ণভাবেই তিনি ভোট প্রদান করেছেন। আর এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রিতীকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে গৃহিনী আসমা আক্তার বলেন, ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ বেশ ভালো ও সুন্দর রয়েছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে নারী ভোটারদের উপস্থিতি আরো বাড়বে।
রিটানিং কর্মকর্তা মো: মুজিবুর রহমান জানান, সকাল ৮টা থেকে বরিশাল সিটিতে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ বজায় রাখতে যা যা করনীয় তার সবই করা হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। সব ধরনের নাশকতা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত আছে বলে জানান তিনি।