সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্বল্প সুদে গৃহঋণের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী চাকরি স্থায়ী হওয়ার সর্বনিম্ন ৫ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫৬ বছর পর্যন্ত গৃহনির্মাণে ৫ শতাংশ সরল সুদে ঋণ নিতে পারবেন সরকারি কর্মচারীরা।
এখন থেকে যেকোন তফসিলভূক্ত ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ শতাংশ সরল সুদে সর্বোচ্চ ৭৫ লক্ষ টাকা ও সর্বনিম্ন ৩০ লক্ষ টাকা গৃহ ঋণ পাবেন সরকারি কর্মচারিরা। তবে ১০ শতাংশ সরল সুদের মধ্যে ঋণ গ্রহীতা পরিশোধ করবে ৫ শতাংশ সুদ আর অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেব প্রদান করবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি চাকরিজীবীরা শতকরা পাঁচ শতাংশ সুদে গৃহঋণ পাবেন। প্রজ্ঞাপনের আওতায় জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়া যাবে। এ ঋণের মোট সদুহার ১০ শতাংশ। তবে এ ১০ শতাংশ সুদের ৫ শতাংশ সরকার এবং বাকি ৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবে। ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ (ঋণ পরিশোধ শুরুর সময়) ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটির মাধ্যমে ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান-সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১৮’ এর খসড়া তৈরি করা হয়। ওই খসড়ায় বেতন স্কেলের গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের প্রস্তাব করা হয়। তবে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সর্বনিম্ন ঋণের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা কমিয়ে ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে।
বর্তমানে ১০ শতাংশ সুদহারে একজন সরকারি কর্মচারী সর্বোচ্চ ঋণ পান এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুযায়ী উপ-সচিব থেকে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা, জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্তরা ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন। সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সর্বোচ্চ ৫৬ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরিজীবীরা এ ঋণ নিতে পারবেন।
সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মালিকানাধীন তফসিলি ব্যাংকসমূহ এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে, এক্ষেত্রে অন্য যে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।
নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় বেতনকাঠামোর পঞ্চম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা, যাদের বেতন স্কেল ৪৩ হাজার বা এর বেশি তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরে গৃহনির্মাণে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে এর পরিমাণ হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।
বেতনকাঠামোর নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বা যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
দশম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যাদের মূল বেতন ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড বা নয় হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড বা আট হাজার ২৫০ টাকা থেকে আট হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পান এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন ৩০ লাখ টাকা। জেলা সদরে এটি হবে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য পাবেন ২০ লাখ টাকা।
![](https://cloud.matopath.com/mop/2022/03/onnesha-ad.jpeg)