কোরবানি ঈদে স্বাভাবিকভাবেই বাড়িতে অনেক মাংস হয়ে যায়। এই মাংস তো আর সব এক সাথে খাওয়া সম্ভব না। আবার মাংস ভালো মতো সংরক্ষণ করতে না পারলে বেশি দিন টিকবে না। তবে বাড়িতে যদি ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যায়, বা কোনো কারণে ফ্রিজ না থাকে? তাহলে মাংস সংরক্ষণ করবেন কীভাবে! যখন ফ্রিজ ছিল না তখন মানুষ মাংস বা খাবার সংরক্ষণ করত কীভাবে জানেন কী? জি ফ্রিজ ছাড়াও অনেক উপায় আছে মাংস সংরক্ষণ করার। কিছু নিয়ম মেনে সংরক্ষণ করলে ৬ মাস পর্যন্ত মাংস ভালো রাখা যায়। তবে আসুন জেনে নেই ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণ করার কিছু নিয়ম।
চর্বিতে সংরক্ষণের নিয়ম:
মাংস মাঝারি সাইজে কেটে ভালোমতো ধুয়ে সব পানি ঝরিয়ে নিন। এমন একটা পাত্র নিন যেন ওই পাত্রেই মাংস সংরক্ষণ করতে পারবেন। পাত্রে বেশি পরিমাণে চর্বি দিয়ে তাতে মাংস দিন। এবার পরিমাণ মতো লবণ এবং গরম মশলা ও তেজপাতা দিন। মাংসের অন্য সব মশলাও দিলে বেশি স্বাদ হয়। তবে তা দিতে হবে পরিমানে সামান্য। বেশি মসলা দিলে রান্না করা মাংসের মতো হয়েযাবে। চুলায় আঁচ বাড়িয়ে জ্বাল দিন। সব চর্বি গলে গেলে খেয়াল করুন মাংসে পানি আছে কিনা। যদি পানি থাকে তা শুকিয়ে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ঢেকে রেখে দিন।
. পাত্রটি এমন জায়গায় রাখুন যেন চুলার তাপ বা গরম কম লাগে। নয়ত মাংস তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে।
. প্রথম সপ্তাহে ২ বার এবং পরে সাপ্তাহে অন্তত ১ বার মাংস জ্বাল দিয়ে রাখুন।
. চর্বি দেয়ার সময় মনে রাখবেন মাংস যেন চর্বির অন্তত আধা ইঞ্চি নিচে ঢুবে থাকে।
. এলোমনিয়ামের হাঁড়িতে রাখা ঠিক হবে না। ১ সপ্তাহের বেশি থাকলে লবণ থাকার কারণে এলোমনিয়ামের হাঁড়ি ছিদ্র হয়ে যায়।
রোদে শুকিয়ে রাখার নিয়ম:
. বাড়িতে যদি ফ্রিজ না থাকে তাহলে রোদে শুকিয়ে মাংস সংরক্ষণ করতে পারেন। রোদে শুকিয়ে মাংস রাখতে চাইলে প্রথমেই মাংস থেকে সব চর্বি কেটে বাদ দিয়ে দিন। মাংস একটু পাতলা ও লম্বা করে কেটে নিন। অল্প লবণ দিয়ে জ্বাল দিন। আপনি চাইলে হলুদও দিতে পারেন। বেশি সেদ্ধ করা যাবে না। ভালোমতো পানি শুকিয়ে ঠাণ্ডা করুন। তারপর জিআই তার (গুণা)র ভেতরে লম্বা মালার মতো করে গেথে নিন। তারপর ৬-৭ দিন কড়া রোদে শুকিয়ে নিন।
. খেয়াল রাখবেন মাংস যেন ছায়াতে না থাকে। বেশিক্ষণ ছায়াতে থাকলে মাংসে ফাঙ্গাস ধরে যাবে।
. মাংস শুকানোর পর ভেজা পাত্রে রাখা যাবে না। কাঁচের জারে খবরের কাগজ অথবা ব্লাটিং পেপার রেখে তারপর মাংস রাখুন।
. মাঝে মাঝে জার থেকে বের করে মাংস শুকিয়ে রাখুন। এভাবে মাংস ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
. মাংস শুকানোর সময় পাতলা কাপড় বা নেট দিয়ে ঢেকে রাখুন। এতে ধুলাবালি পরবে না। কাক-পাখি এসে নষ্ট করতে পারবে না।
. অনেক পাতলা করে মাংস শুকালে সরাসরি ভেঁজে বা রান্না করে খেতে পারবেন। আর একটু ভারি হলে মাংস রান্নার আগে ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে রান্না করুন। তাহলে মাংস নরম থাকবে।
রান্না করে সংরক্ষণ:
. স্বাভাবিক নিয়মে মাংস রাখতে চাইলে মশলা কম এবং তেল বেশি দিয়ে রান্না করেও মাংস ১ সাপ্তাহের মতো রাখা যায়। তবে ঠাণ্ডা যায়গায় রাখতে হবে। ফ্যান ছেড়ে ফ্যানের নিচে রাখতে পারেন। চুলা বা রোদের তাপ পরে এমন জায়গায় থেকে দূরে রাখুন।
. দিনে অন্তত ১ বার ভালো করে জ্বাল দিতে হবে।
. জ্বাল দেয়ার সময় খুব বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না।
. জ্বাল দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে তলানিতে যেন না লেগে যায়।
. মাংসের টুকরা একটু বড় রাখুন নয়তো মাংস তাড়াতাড়ি গলে যাবে।
. মাংসে শুধু তেল থাকবে। পানি থাকা যাবে না। তাহলে মাংস গলে যাবে এবং গন্ধ হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি।
লবণ ও লেবুর রস দিয়ে সংরক্ষণ:
লবণ ও লেবু রস মাখিয়ে গরুর মাংস সংরক্ষণ করতে পারেন। মাংসের বড় বড় টুকরা ও কুচি মাংস কিমা করে আপনি তা সংরক্ষণ করতে পারেন।
ভেজে সংরক্ষণ:
মাংস ভেজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মাংসে লবণ আর হলুদ মিশিয়ে ডুবো তেলে ভেজে সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে মাংস নষ্ট হবে না। অনেকদিন ভালো থাকবে।