নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের জন্য সারাদেশে আগাম মামলা দিয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সারাদেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে। এটা আসলে এখন নরক হয়ে গেছে। প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়নে মামলা আগাম দিয়ে রাখা হচ্ছে। ঢাকার সব থানায়, ওয়ার্ডে আগাম মামলা দিয়ে রাখছে। নির্বাচন এলে এসব মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে। কী কাপুরুষ, কী কাওয়ার্ড! সরকার কী পরিমাণ কাওয়ার্ড হলে এমন ব্যবস্থা নিতে পারে।’
শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সভায় ফখরুল এসব কথা বলেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
কাজী জাফরকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কাজী জাফর আহমেদের মধ্যে নেতৃত্বের সব গুণাবলি ছিল। রাজনীতির বাইরেও তিনি শ্রমিক নেতা হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন জায়গায় থাকলেও জনগণের কাছ থেকে তিনি কখনও বিচ্যুত হননি। তিনি ছিলেন কিংবদন্তি নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতির বাঁকে বাঁকে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তিনি সামনে চলে আসতেন।’
ফখরুল বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সরকারের প্রলোভনে এরশাদ সাড়া দিলেও কাজী জাফর আহমেদ এতে সাড়া দেননি। জাতীয় ক্ষেত্রে তাকে খুব প্রয়োজন ছিল। তার অনুপস্থিতি আমরা অনুভব করি। শেষ বেলায় আমাদেরকে বলে গিয়েছেন, কখনও গণতন্ত্রের বিপক্ষে যাবে না।’
ফখরুল জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন প্রচণ্ড অসুস্থ। এর মধ্যেও তিনি আন্দোলন না থামিয়ে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে বিজয়ী করার কথা বলছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে বাতিস্তা সরকার সাজা দেয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ইতিহাস আমাকে ধারণ করবে, তোমরা আমাকে সাজা দিতে পারো। কাজী জাফর আহমেদকে ইতিহাস ধারণ করে আছে। বেগম খালেদা জিয়াকে ইতিহাস ধারণ করছে।’
সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘সরকারের লোকেরা বহু কথা বলছেন। কিছুদিন আগে তারা সবক দিতেন। নির্বাচনের কথা বলছেন। আসেন না নির্বাচনে, ভয় কেন?’
‘সুষ্ঠু নির্বাচনের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন। কোথাও সভা, সমাবেশ করতে দেবেন না, ফেসবুকে লিখলে ৫৭ ধারা, কাগজে লিখতে দিচ্ছেন না। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের জানিয়ে দিয়েছে, শেষ রক্ষা হবে না।’
২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন উপলক্ষে আয়োজিত আলোক উৎসবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের ফুলঝুরি ছড়ানো হচ্ছে। কাল দেখলাম অন্ধকার আকাশে আতশবাজি করা হচ্ছে। এতে কাজ হবে না। আওয়ামী লীগ প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে। সামনের নির্বাচনে পরাজয় ঠেকাতে সব অন্যায়, অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বাস্তবতা ঠেকাতে তারা যা খুশি তাই করছে। টিকে থাকতে সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে।’
ইদানীং ভারতের পত্রপত্রিকাগুলো ভিন্ন সুরে কথা বলছে দাবি করেন ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক রাষ্টদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটবে। এটাই বাস্তবতা।’
আগামী নির্বাচনে যাওয়ার শর্ত দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ যখন হবে তখন নির্বাচন। নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন ভেঙে যোগ্য মানুষকে দিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। এগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে।’
‘কিন্তু কোনো কিছু পরিবর্তন না করে পুলিশ দিয়ে নেতাকর্মীদের কারাগারে আটকে রাখবেন, একা একা হেলিকপ্টারে করে ঘুরে বেড়াবেন, ভোট দেবেন এটা দেশের মানুষ হতে দেবে না। মানুষ গ্রহণ করবে না।’
স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী। আরও বক্তব্য দেন মোস্তফা জামাল হায়দার, জাফর আহমেদের মেয়ে কাজী জয়া, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, খন্দকার গোলাম মোর্তজা, ড. রেদওয়ান আহমেদ, আহসান হাবিব লিঙ্কন, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, খন্দকার লুৎফর রহমান, গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে তাসমিয়া প্রধান প্রমুখ।