আইডিবি রোহিঙ্গাদের নিয়ে চুপ থাকতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট

নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) চুপ থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে আইডিবিসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে সুনির্দিষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

রবিবার সকালে রাজধানীর রেডিসন হোটেলে জেদ্দাভিত্তিক ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

universel cardiac hospital

আইডিবির আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয় উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ একটি মানবিক সংকট মোকাবেলা করছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে তাদের প্রবেশ করতে দিয়েছে। নিজস্ব সম্পদ, বাস্তুসংস্থান ও স্থানীয় জনগোষ্ঠির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে জানা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে দেশে আসতে দিয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন আমরা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাই।’

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারকে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বনেতাদের চাপ অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আইডিবি চুপ থাকতে পারে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) নিপীড়িত মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন জাতিগত নির্মূলের মুখোমুখি, তখন আইডিবি চুপ থাকতে পারে না। কাজেই জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আইডিবিকে আমি দৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এছাড়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন।

প্রতিবেশি দেশসমূহের তুলনায় মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। স্বাস্থ্য খাতকেও এগিয়ে নিতে কাজ করছি। ২০০ প্রকার সরকারি সেবা জনগণের হাতে পৌঁছে দিয়েছি।’

‘আমরা ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৩ হাজার ৫৪২ জন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী নিয়োগের মাধ্যমে গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি।’

সরকার বিদ্যুৎ ও  জ্বালানি সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ছিল মাত্র চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা সক্ষমতা অর্জন করেছি। দেশে পাওয়ার প্লান্টের সংখ্যা ১১৮টি। বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিপণন ব্যবস্থাও উন্নত করা হচ্ছে। বর্তমানে ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য, ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা।’

‘আমরা মানুষের কাছে সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ বিতরণ করছি। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন তেল ও গ্যাস খনি অনুসন্ধানে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা তরলকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি ইতোমধ্যেই শুরু করেছি।’

প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। দেশের প্রান্তিক অঞ্চলকে সংযুক্ত অঞ্চল এবং বিস্তৃত তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ১৫ কোটি তিন লাখ মোবাইল সিম ব্যবহার হয়। ৮ থেকে ৬ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জন্মনিবন্ধন, সামাজিক ভাতাসহ ২০০ প্রকার সরকারি সেনা জনগণের হাতের নাগালে। ১৮ হাজার সরকারি অফিস একটি সমন্বিত নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। দেশে বর্তমানে ৯১ শতাংশ টেলিঘনত্ব এবং ৫০.১ শতাংশ ইন্টারনেট ঘনত্ব রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি অফিসে ই-ফাইল, ইলেকট্রনিক কেনাকাটা ইজিপি, ই-কমার্স, স্থানীয় পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার, মোবাইলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা, ডিজিটাল পরীক্ষাগার, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে। ১১ মে মহাশূন্যে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট ক্লাবে যুক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।’

নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমাজের সকল স্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষে আমরা নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এবং জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করেছি। উন্নয়ন কর্মাকাণ্ডে নারীর প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

‘বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদন ২০১৭ অনুসারে ১৪৪টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম। এক্ষেত্রে শ্রীলংকা, ভুটান, মালদ্বীপ ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে। আমরা ৩.৫ মিলিয়ন নারী পোশাকশ্রমিকদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত কর্মক্ষেত্র তৈরির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত যেকোনো ইস্যুতে বাংলাদেশ অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্র। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন এবং অভিযোজক করার জন্য বাংলাদেশ জলবায়ু কমিশন ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি এবং এর আওতায় বেশ কিছু কর্মসূচিও আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি।’

পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সেক্টরে বিনিয়োগের চাহিদার বর্তমান অবস্থা ও ঘাটতি পর্যালোচনা করার জন্য কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্লান্ট ২০১৬-২১ প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বিনিয়োগ পরিকল্পনা মতে সম্পূর্ণ মেয়াদে মোট ১১ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে এ পর্যন্ত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ আরও ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা সফল হয়েছি। এখন জাতীয় কর্মপরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ড. বন্দর এম এইচ হাজ্জার বক্তব্য দেন

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে