নীতি-নির্ধারণেও বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ

মাহবুব আলম

একটা দেশের উন্নতির জন্য নারী-পুরুষ সকলেরই অবদান থাকতে হয়। কেবলমাত্র পুরুষেরা কখনোই একটা দেশের পুর্নাঙ্গ বা কাঙ্খিত উন্নতি করতে পারেনা। আমাদের দেশ তথা সমাজ এক সময় পুরুষ শাসিত হলেও ধীরে ধীরে সর্বস্তরেই এখন নারীরা উঠে আসছেন। গ্রাম কিংবা শহর, ধনী অথবা গরিব-সব সমাজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। পারিবারিক সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে সন্তান লালন-পালন সবক্ষেত্রেই নারীদের সিদ্ধান্তকে বেশ প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকারের আমলে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আর পরিবার ছাড়াও মাঠ প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। সরকারের নানা উদ্যোগ ও সুযোগ সৃষ্টির ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমানে প্লেন চালনা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের নারীরা রেলগাড়িও চালায়। চালায় সমুদ্রগামী জাহাজ। দেশের শীর্ষ পদেও নারী। উদ্যোক্তা হিসেবেও নারীর অবস্থান সংহত হচ্ছে ক্রমশই। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বাড়বে।
জানা যায়, বাংলাদেশে ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে মাত্র পাঁচজন নারী সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। বর্তমানে সংসদে নারী সদস্য রয়েছেন ৬৯ জন।
এছাড়া মন্ত্রিসভায় নারী আছেন, প্রধানমন্ত্রী নারী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেতা নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী, এমনকি সংসদ উপনেতাও একজন নারী।
বাংলাদেশে সরকারের নীতি নির্ধারণে মন্ত্রীদের পরই যাদের ভূমিকা, তারা হলেন সচিব। এই সচিব বা আমলারাই নীতি নির্ধারণ এবং নীতি বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা পালন করেন।
সেখানেও নারীরা রয়েছেন। বর্তমান সরকারের প্রশাসনে সচিব পদমর্যাদায় কাজ করছেন মোট ৭৮ জন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে সাতজন নারী সচিব। দুই জন ভারপ্রাপ্ত সচিব। সব মিলিয়ে বলা যায়, নারী সচিব রয়েছেন নয় জন।
এ বিষয়ে নারী নেত্রী এলিনা খান বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের উৎসাহ দেয়। নারীরা এখন পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী এবং বিমান বাহিনীতেও ভালো করছেন। নারী শিক্ষার হারও বাড়ছে। নীতি নির্ধারণে নারীর অবস্থান সংহত করতে পারলে নারীর ক্ষমতায়ন আরো বাড়বে।
তথ্য অনুযায়ী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে মোট ১৩৪ জন কর্মকর্তার মধ্যে নারী রয়েছেন ৩৫ জন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ৬৭ জনের মধ্যে নারী কর্মকর্তা ১২ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৫৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে নারী ৯ জন।
২৮ জন নারী কর্মকর্তা রয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে নারী কর্মকর্তা তিনজন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চার জন নারী কর্মকর্তা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নারী ১৫ জন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোট ৩৮ জনের মধ্যে নারী কর্মকর্তা ছয় জন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ে নারী কর্মকর্তা রয়েছেন ১১ জন। মোটমুটি সব মন্ত্রণালয়েই রয়েছে নারীর উপস্থিতি।
সূত্র মতে, সরকারি এবং আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩৪টি। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮৩ হাজার ১৩৩। অর্থাৎ শতকরা ৭ দশমিক ৬ ভাগ। বিচার বিভাগে বিচারক পদের ১০ শতাংশ নারী রয়েছেন, হাইকোর্টেও বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে এলিনা খানের ভাষ্য, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। রাজনীতিতেও নারীর উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো। নারীকে নারীর প্রতিনিধিত্ব কেেত হবে। এটা না হলে সত্যিকারের নারীর ক্ষমতায়ন নয় সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৫ কোটি ৪১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে এক কোটি ৬২ লাখ নারী। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৯৭ জন।
বিদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ৮০ শতাংশ কর্মীই নারী। আর দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ ব্যবহারকারীও নারী।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে নারী সমাজ এগিয়েছে। কর্মজীবী নারী বাড়ছে। ভবিষ্যতে যাতে এ সংখ্যা বাড়ে সে জন্য সরকার নারী ও শিশুকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
নারীর ক্ষমতায়নের কারণেই এখন বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেয়ার করুন

universel cardiac hospital

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে