এশিয়া কাপে এসিসি কি ভারতের হয়ে কাজ করছে?

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব শেষ না হতেই তৈরি হলো বিতর্ক।কারণ গ্রুপ পর্ব শেষ হওয়ার আগেই সুপার ফোর পর্বের সূচি প্রকাশ করেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। নিয়মানুযায়ী যে সূচি নির্ধারণ হওয়ার কথা গ্রুপ পর্ব শেষে। তবে কি ভারতের চাপেই এসিসি এমন কান্ড ঘটিয়েছে?

অভিযোগ ওঠেছে, সুপার ফোরের শিডিউলে ভারতকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুইটি শহরে। একটি হলো দুবাই। অপরটি আবুধাবি। গ্রুপ পর্বে ভারতের দুইটি ম্যাচ রাখা হয়েছিল দুবাইতে। এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই কারো। কিন্তু সুপার ফোর পর্বে ভারতের তিনটি ম্যাচই দুবাইতে রাখা হয়েছে! অথচ অন্য প্রতিটি দলেরই আবুধাবিতে ম্যাচ রাখা হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে এমনিতে খুবই গরম। খেলোয়াড়দের জন্য ভ্রমণ করা খুবই কষ্টকর। আবুধাবিতে ম্যাচ খেলতে যেতে হলে খেলোয়াড়দের প্রায় এক-দেড় ঘণ্টা ভ্রমণ করতে হবে।

সুপার ফোরের ফিকশ্চারে ভারতকে এমন সুবিধা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তান দলের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ বলেছেন, ‘ভ্রমণ একটা ইস্যু। ম্যাচের আগে যদি আপনাকে এক-দেড় ঘণ্টা ভ্রমণ করতে হয় তাহলে সেটা খুবই কষ্টকর।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি সব দলকেই সমান সুযোগ দেয়া উচিৎ। সেটা ভারত হোক, পাকিস্তান হোক বা অন্য কোনো দল হোক। যদি আবুধাবিতে ম্যাচ হয় তাহলে সেখানে প্রতিটি দলেরই একটা বা দুইটা করে ম্যাচ রাখা উচিৎ। আমি জানি না এসিসি এটা কী করল।’

এদিকে পাকিস্তানি অধিনায়কের পর এশিয়া কাপের সুপার ফোরের সূচিতে আচমকা পরিবর্তন আনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তুজা। ভারতকে সুবিধা দিয়ে প্রথম রাউন্ড শেষ হওয়ার আগে নক আউট পর্বের ফরম্যাটে পরিবর্তন আনায় বিস্মিত তিনি।

বুধবার ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বিস্মিত মাশরাফি বলেন,‘ এটা অবশ্যই হতাশার। প্রথম থেকেই আমাদের পরিকল্পনায় ছিল, শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ম্যাচে হারাতে পারলে আমরা হয়ত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এগিয়ে যাব। এরপর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ দলের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলব সুপার ফোরে। কিন্তু আজকে জানতে পেরেছি, আমরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতি আর হারি, আমরা ‘বি ২’ হয়ে গেছি- এটা অবশ্যই হতাশার। গ্রুপ ম্যাচ বলেন বা যা বলেন, একটা নিয়ম থাকে টুর্নামেন্টের। সেই নিয়মের বাইরে চলে যাচ্ছি আমরা। এটাই হতাশার।’

মঙ্গলবারে রাতে এসিসি বিতর্কিত সিদ্ধান্তটা নেয়। মাশরাফিরা বিষয়টা জানতে পারেন বুধবার প্রাকটিসে আসার পর। এটা শোনার পরই বিস্মিত হয়ে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেন,‘ দেখেন, একজন পাগলও এটাতে ভালোভাবে রিঅ্যাক্ট করবে না। এটা অবশ্যই ঠিক না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের টুর্নামেন্টে ম্যাচের আগের দিন আপনি শুনছেন যে গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচের আগেই আমরা ‘বি ২’। সবাই হতাশা প্রকাশ না করলেও প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক।’

এশিয়া কাপের সূচি এমনিতেই অনেক টাইট। ভারতের হস্তক্ষেপে সেই সূচি বাকি তিন দলের জন্য আরও কঠিন হয়ে গেছে। যেমন, বৃহস্পতিবার সকালে আফগাস্তিানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলতে আবুধাবিতে যেতে হবে বাংলাদেশ দলকে। ম্যাচ শুরু স্থানীয় সময় সাড়ে তিনটায়।

ম্যাচ শেষ করে, পোস্ট ম্যাচে কথা বলে দুবাইতে ফিরতে ফিরতে বেজে যাবে প্রায় রাত আড়াইটা তিনটা। ম্যাচ খেলার ক্লান্তি, গভীর রাতের ভ্রমণ ক্লান্তি, ঘুম পূরণ না হওযার ক্লান্তি নিয়েই শুক্রবার আবার মাঠে নামতে হবে মাশরাফিদের।

মাশরাফি বলেন,‘সবকিছু মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতি। এটা যদি বাংলাদেশে হতো, ওখানেও অনেক গরম, তবু ম্যানেজ করা যেত। কিন্তু এখানে শরীর থেকে যে পরিমাণ ঘাম বের হয়, যতটা শক্তি ক্ষয় হয়, সেটা রিকভারির জন্য নির্দিষ্ট একটা সময় দরকার। যেটা হবে না, ২১ তারিখের ম্যাচে অনেক প্রভাব পড়তে পারে। আমি নিশ্চিত যে এখন মেন্টাল ফিটনেসের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’

‘ছয়দিনে চারটি ম্যাচ খেলতে হবে। পরের তিনটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই গরমে ৬ দিনে ৪টি ম্যাচ, আমি নিশ্চিত যে রাজি হবে না কোনো দল। বলতে পারেন সব দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমাদের ব্যাপারটা হলো যে, ২১ তারিখে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, তার আগের রাতে গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ খেলতে হবে। সুপার ফোরে প্রথম ম্যাচটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই ম্যাচে আমরা সবাই শারীরিকভাবে শতভাগ থাকতে না পারলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়।সব মিলিয়ে অস্থির অবস্থায় আছি আমরা।’

সুপার ফোরের চার দলের অবস্থান নির্দিষ্ট করে দিয়ে আচমকা সূচিতে পরিবর্তন আনে এসিসি। বিস্ময়কর এ নিয়মে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বা রানার্স আপ হয়েও লাভ নেই। যেমন ‘বি’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ যদি চ্যাম্পিয়ন হয়ও তাতে লাভ নেই। এই গ্রুপ থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ‘টি ২’ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তান যদি বাংলাদেশের কাছে হেরেও যায় তাহলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের মতো মর্যাদা পাবে। তাদের অবস্থান ‘বি ১’। অন্যদিকে অপর গ্রুপ থেকে ‘এ ১ স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে ভারতকে। আর পাকিস্তান পেয়েছে ‘এ ২’ স্ট্যাটাস।

ক্রিকেট দুনিয়া এই প্রথম এমন উদ্ভট নিয়ম দেখলো।অথচ সুপার ফোরের লাইনআপ ঠিক হওয়ার কথা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ- আফগানিস্তান ম্যাচ শেষে, মানে প্রথম রাউন্ড শেষ হওয়ার পর।

আগে যে সিডিউল ছিল সেখানে দেখা যায়, সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচ ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও ‘বি’ গ্রুপ রানার্স আপের মধ্যে। দ্বিতীয় ম্যাচ ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ‘এ’ গ্রুপ রানার্সআপ দলের। এভাবেই লাইন আপ হওয়ার কথা ছিল।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে