বিষাক্ত ধোঁয়া : আকাশচুম্বী ভবনের পথে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফাইল ছবি

ভারতের রাজধানী দিল্লির বায়ুদূষণ গত কয়েক বছরে ভয়ঙ্কর পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতি বছর সাধারণত অক্টোবর নভেম্বর মাসে দিল্লির বাতাসে ধোঁয়া ও কুয়াশা মিলে তৈরি হয় বিষাক্ত ধোঁয়াশা বা ‘স্মগ’। এরইমধ্যে ভারতীয় মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এই দূষণকে আশঙ্কাজনক বলে ঘোষণা দিয়েছে।

এবার তাই দিল্লির দূষণ থেকে নগরবাসীকে নিরাপদ রাখার জন্য এবার ভিন্নধর্মী এক চিন্তাভাবনা করছে দেশটি। দুবাই ভিত্তিক আর্কিটেকচার প্রতিষ্ঠান জেনেরা স্পেস প্রস্তাব করেছে ‘দি স্মগ প্রোজেক্ট’। দুবাই ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাব করা এই স্মগ প্রোজেক্টের আলোকে দিল্লিতে তৈরি হবে আকাশচুম্বী ভবন। তাদের যুক্তি, ভবনগুলো অনেক বেশি উঁচু হওয়ার কারণে এখানকার বাসিন্দারা বায়ুদূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

universel cardiac hospital

তবে প্রতিষ্ঠানটির এই প্রকল্পে ভারত কতটা সাড়া দেয় সেটি অনেকটাই নির্ভর করছে দেশটির আগামী বছর নির্বাচনে বিজয়ী সরকারের ওপর।

৪৪টি সিগারেটের মধ্যে নিঃশ্বাস নিলে যেমন পরিবেশ তৈরি হয় গত বছর তেমন দূষণ প্রত্যক্ষ করেছে দিল্লিবাসী। দিল্লির বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ সহ্যমাত্রার দ্বিগুণে পৌঁছেছে। গত বছর খোদ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, প্রতি বছর এই সময়টা দিল্লি এক মাসের গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারতে। বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশের ঢাকা। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি ও চীনের বেইজিং।

বায়ুতে অনেক উপাদান আছে, তার মধ্যে বায়ুদূষণের জন্য দায়ী উপাদানকে বলা হয় ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার্স’ বা সংক্ষেপে পিএম। বাতাসে ভাসমান  পিএম পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পিপিএম-পার্টস পার মিলিয়ন) এককে। এসব বস্তুকণাকে ১০ মাইক্রোমিটার ও ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস শ্রেণিতে ভাগ করে তার পরিমাণের ভিত্তিতে ঝুঁকি নিরূপণ করেন গবেষকরা। মানবদেহের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক পার্টিকুলেট ম্যাটার্স হচ্ছে পিএম ২.৫ (যে পার্টিকুলেট ম্যাটারের পরিধি ২ দশমিক ৫ মাইক্রনের কম)। এ কারণেই নগরবাসীর স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন ভারত সরকার।

স্মগ প্রোজেক্টটি ইতোমধ্যে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রচলিত চিন্তার বাইরের প্রস্তাবনা হিসেবে ‘বিশ্ব স্থাপত্য উৎসব-২০১৮’ এ জায়গা করে নিয়েছে স্মগ প্রোজেক্ট।

প্রকল্পটির প্রধান স্থপতি নাজমুস চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ভারতের রাজধানী দিল্লি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। সেই পরিস্থিতি থেকে নগরবাসীকে বের করে আনতে এই প্রকল্প হতে পারে দারুণ এক সমাধান। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে কেউ-ই হয়তো দায়-দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিতে রাজি হতে চাইবেন না। এখনই যে পরিস্থিতি তাতে আগামী ২০ বছর পর ২০৪০ সালে এই দূষণ ৭৭৫ শতাংশ বাড়বে।

স্মগ প্রজেক্ট সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মি. চৌধুরী বলেন, আকাশচুম্বী ভবনগুলো এমনভাবে তৈরি হবে যেখানে অনেক উঁচুতে বায়ু শোধনের জন্য বিশেষ যন্ত্র থাকবে। প্রতিটা যন্ত্র প্রতিদিন ৩৫৩ মিলিয়ন কিউবিক ফুট নির্মল বায়ুর যোগান দিতে সক্ষম হবে। এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার কিছুটা হলেও বায়ুদূষণের থেকে রক্ষা পাবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে