ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘তামাশার নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে এ ধরনের নির্বাচন আর জনগণ দেখতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন । একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের জাতীয় মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ নানা দাবিতে শুক্রবার এই সমাবেশের ডাক দেয় দলটি।
আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয় জুমার নামাজের পর। তবে সকাল থেকেই নেতা-কর্মীরা আসতে থাকে উদ্যানের আশপাশে। এক পর্যায়ে উদ্যান ছাড়িয়ে আশেপাশের সড়কও লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। দুপুরের পর শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। এর মধ্যেও সমাবেশস্থল ছেড়ে যাননি নেতাকর্মীরা।
ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সারাদেশের জনগণের মন জয় করার নির্দেশ দিয়ে রেজাউল করীম বলেন, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে এখনই মানুষের দ্বারে দ্বারে নেমে পড়ুন। মানুষের মন জয় করুন। জনগণের সেবা করুন। দেশের যেকোনো কল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
তিনি বলেন, হাতপাখা হলো শান্তির প্রতীক। শান্তির প্রতীক নিয়ে জনগণের কাছে আগামীর শান্তির বার্তা পৌঁছে দিন। আমরা একটি মডেল রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই। যেখানে দুর্নীতি থাকবে না, চাঁদাবাজি, খুন, গুম থাকবে না। মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে।
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, অনেকেই বলে ইসলামি দল ক্ষমতায় গেলে মানুষ শান্তি পাবে না। নারীরা ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, এ ধারণা ভুল। ইসলাম বিজয় হলে নারীরা বেশি সম্মানিত হবে। সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে। সবার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে। যে যেখানে আছে সে অবস্থায় বহাল থাকবে, কেবল দুর্নীতি থাকবে না।
রেজাউল করীম বলেন, বিগত ১০ বছরে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও অঢেল দুর্নীতি হয়েছে। নির্বাচনকে এখন মানুষ তামাশা মনে করে। আগামীতে বাংলার জনগণ আর তামাশার নির্বাচন চায় না। ক্ষমতাসীনরা জাতীয় সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা হলো দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। বর্তমান সংসদে ১৫৪ জন বিনাভোটে জয়ী সদস্য রয়েছে। এসব অবৈধ সাংসদ বহাল থাকা অবস্থায় দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।
সুষ্ঠু নির্বাচনের চরমোনাই পীরের দেয়া ১০ দফা হলো: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে; সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে; বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে; তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে; নির্বাচনে সব দলের জন্যে সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। রেডিও-টিভিসহ সব সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে; দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযেগ্যে ঘোষণা করতে হবে; নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে; রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে; কোটা সংস্কার অন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে গ্রেপ্তার ছাত্রদের মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।