প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অাশ্বস্ত করেছেন যে, আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) থেকে বাদ পড়াদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দুকে মোদির কাছে থেকে পাওয়া এই আশ্বস্তের কথা জানিয়েছেন।
এইচ টি ইমাম বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকাতে যাদের নাম নেই তাদেরকে আগামীতে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না।
ঢাকায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের একদল প্রতিনিধিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার কাছ থেকেও ঢাকা একই ধরনের আশ্বাস পেয়েছে।
তবে কখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ আশ্বাস দিয়েছেন সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এইচ টি ইমাম।
তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, অামাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে এ আশ্বাস পেয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেছেন, আসামে এনআরসি ইস্যুতে যা ঘটছে তা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের নেতারাসহ লাখ লাখ মানুষ সে দেশে পাড়ি জমায়। এটা এখন সম্ভব নয়।
চলতি বছরের ৩০ জুলাই ভারতীয় নাগরিকত্বের চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে অাসামের প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ দেয় প্রদেশের সরকার। আসামের ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন (এনআরসি) কর্তৃপক্ষের তালিকা থেকে বাদ পড়ে তারা। প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসামে পাড়ি জমানো অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে ১৯৫১ সালের পর সেই সময় প্রথম নাগরিকত্বের তালিকা হালনাগাদ করে আসাম।
ওই সময় এনআরসির কর্মকর্তারা বলেন, এটি খসড়া তালিকা মাত্র। সুতরাং এখনই কাউকে গ্রেফতার অথবা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে না। তবে সমালোচকরা বলেছেন, নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়াদের অধিকাংশই প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসিলম জনগোষ্ঠী এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।
এনআরসি কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে তিন কোটি ২৯ লাখ আবেদন জমা পড়েছিল। তবে যথাযথ নথি ও তথ্য-উপাত্ত দিতে না পারায় ৪০ থেকে ৪১ লাখ আসামিজ ভারতীয় নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
ভারতের আসামই একমাত্র রাজ্য যেখানকার বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বিভিন্ন নথিপত্র জমা দেয়ার পাশাপাশি নিবন্ধিত হতে হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর একদিন আগে অর্থাৎ ২৪ মার্চের পূর্বে আসামিজদের বংশধররা যে সেখানে বসবাস করতেন সেই দাবির পক্ষে কাগজপত্র জমা দিতে হয়েছে এবারের এনআরসিতে জায়গা পাওয়ার জন্য।
এর আগে, ১৯৫১ সালে এক জরিপ চালানোর পর প্রথমবারের মতো এনআরসি তালিকা প্রস্তুত করে আসাম। ওই সময় আসামের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৮০ লাখ। পরে ২০০৫ সালে রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার এবং অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় এক চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ১৯৮৫ সালের আসাম অ্যাকর্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
২০০৯ সালে আসাম পাবলিক ওয়ার্ক নামের একটি বেসরকারি সংস্থা রাজ্যের অবৈধ বাংলাদেশিদের শনাক্ত করার কাজ অব্যাহত রাখতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
পরে সুপ্রিম কোর্ট নির্বিঘ্নে অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্তকরণ কাজ চালু রাখতে আসাম সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়। এর তিন বছর পর আসামে নাগরিকত্বের চূড়ান্ত খসড়া তালিকা গত ৩০ জুলাই প্রকাশ করা হয়।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের অঙ্গীকার করেছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর ২০১৬ সালে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার নাগরিকত্ব সংশোধন বিল-২০১৬ সালে পাস করে।
কিন্তু বিজেপির এই প্রস্তাবে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মনিপুরের কিছু রাজনৈতিক দল নাখোশ; যারা ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জোট গঠন করে সরকারে রয়েছে। এই ইস্যুতে বিজেপির ওপর থেকে তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ারও হুমকি দিয়েছে।