প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতি যে সম্মান হারিয়েছিল তা গত ১০ বছরে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করেন । দেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে চান বলে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি। শনিবার বিকালে গণভবনে লায়ন ও লিও ক্লাব আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, তিনি তার জীবনকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা এবং দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলাই তার লক্ষ্য, তার আর কোনো কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
তার সরকার শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান বা বদ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক টেকসই উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আর্থ-সামাজিক সূচকে আমরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে এক হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত। প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল স্থাপন, এলএনজি টার্মিনাল এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের এই উন্নয়ন অভিযাত্রায় লায়ন এবং লিও সদস্যদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তারা তাদের মানবসেবামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ডে সব রকমের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নে নেওয়া পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশকে আমরা সর্বক্ষেত্রে উন্নত করতে চাই, স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। দেশের মানুষ যেন আরও উন্নত জীবন পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমাদের ওপর একটা বোঝা এসেছে, মিয়ানমারের শরণার্থীরা। প্রায় ১১ লাখ শরণার্থী আজকে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৭১ সালে ভারতে আশ্রয় নেওয়া আমাদের শরণার্থীদের কথা যখন স্মরণ করেছি তখন তাদের আশ্রয় না দিয়ে পারিনি।
লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল এর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল জাতিসংঘের কনসালটেটিভ স্ট্যাটাস প্রাপ্ত, বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবসেবামূলক সংগঠন। সমাজের দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নিবেদিত এই সংগঠন বিগত একশ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের ২০০টিরও অধিক দেশে মানব সেবায় কাজ করে যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের নবনির্বাচিত পরিচালক কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক আন্তর্জাতিক পরিচালক শেখ কবির হোসেন, এরিয়া লিডার স্বদেশ রঞ্জন সাহা, চেয়ারম্যান অব মল্টিপল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫ বি মমিনুল ইসলাম লিটন বক্তৃতা করেন। লিটন এরশাদ হোসেন রানা অনুষ্ঠানে শপথ বাক্য পাঠ করান।