একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
রায়ের ২ দিন আগে আজ সোমবার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কার কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ এবং ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে থাকার সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চালানো এই হামলায় প্রাণ হারায় ২৩ জন। আহত হয় কয়েকশ।
সে সময় বিএনপি সরকার এই মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। হামলাকারীদেরকে বাঁচিয়ে নিরীহ জজ মিয়াকে ফাঁসানোর চেষ্টা প্রকাশ হয়ে পড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সরকারের সময় পুলিশের তদন্তে জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান এবং জোট সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টুসহ ২২ জনের বিচার শুরু হয়।
তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর অধিকতর তদন্তে তারেক রহমানসহ নতুন করে ৩০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান এবং জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ তিন জনের ফাঁসি হয়েছে অন্য মামলায়।
আগামী বুধবার বহুল আলোচিত এই মামলার রায় হবে । আর এই রায়কে কেন্দ্র করে দলটির সিনিয়র নেতা মওদুদ দাবি করেন, তারা সরকারে থাকার সময় মামলা করে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে বিচার কাজ শেষ করতে চেয়েছিলেন। তবে তখন আওয়ামী লীগের অসহযোগিতা এবং তাদের কিছু ষড়যন্ত্রের কারণে তা শেষ করা সম্ভব হয়নি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেয়া অভিযোগপত্রের কথা তুলে ধরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আইনজীবী বলেন, সেখানে মুফতি হান্নান যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিলেন তাতে তারেক রহমান কিংবা বিএনপির বা প্রশাসনের কারো নাম ছিল না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুফতি হান্নানকে রিমান্ডে নির্মম নিযাতন করে তাকে দিয়ে তারেক রহমানের নাম জড়ানো হয় বলেও অভিযোগ করেন মওদুদ।
এই মামলার রায় নিয়ে বিএনপির ভীতির কারণ জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, বিএনপি শঙ্কিত এই কারণে যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলায় সরকার তার অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তারেক রহমানসহ এই মামলার আসামিদের ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে।
বিএনপি নেতাদের মতে, এই মামলায় তারেক রহমানসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা এবং তখনকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে যেভাবে জড়ানো হয়েছে তা যেকোনো দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি এক নির্লজ্জ বৃদ্ধাঙ্গলি দেখানোর মতো। এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক বিচার প্রক্রিয়া একমাত্র নৈরাজ্যবাদী সরকারের পক্ষেই সম্ভব।
এই মামলার সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মামলার সাথে জড়িত ছিলাম আমি। প্রথমবার চার্জশিটে এই মামলায় তারেক রহমান এবং বিএনপির কারও নাম ছিলো না৷ ৬১ জনের সাক্ষী নেয়া হয়েছিল। তাদের কেউ তারেক রহমান বা বিএনপির কারো নাম বলেনি। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই মামলায় তারেক রহমানকে জড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৬১ জবানবন্দিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তখন তারেক রহমান বা বিএনপির কারো বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেননি। কিন্তু এখন তারেক রহমানকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আমি এখনো বিশ্বাস করি, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই মামলায় তারেক রহমানের সাজা হতে পারে না। যদি হয় সেটা হবে ফরমায়েশি রায়, তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য হবে। যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম মিয়া,জমির উদ্দীন সরকার,মির্জা আব্বাস,গয়েশ্বর চন্দ্র রায়,নজরুল ইসলাম খান,আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার।