একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। জোর প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির সহস্রাধিক প্রার্থী সারা দেশে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংখ্যা এবার একটু বেশিই। কে কার চেয়ে এগিয়ে, তার জানান দিতে গিয়ে দলের অভ্যন্তরেও দেখা দিয়েছে কোন্দল। তৃণমূলেও বিরাজ করছে অসন্তোষ।
তবে এসব মোকাবেলা করে নির্বাচনে জয় লাভের জন্য প্রার্থী মনোনয়নে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই সরাসরি মনিটরিং করছেন।
সম্প্রতি দলের এক যৌথসভাতে শেখ হাসিনা তার ইঙ্গিত দেন, সব নির্বাচনী আসনের দলীয় সংসদ সদস্য ও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিষয়ে সকল জরিপ তার হাতে এসেছে।
তিনি সাফ জানিয়ে দেন, যেসব মনোনয়ন প্রত্যাশী নিজেকে জাহির করতে দলীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন বা এমপিরা নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে গিয়ে দলের ক্ষতি করেছেন, তাদের রিপোর্টও আমার কাছে আছে।
শেখ হাসিনা এ ধরনের কাউকেই মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন এমপিকে গণভবনে ডেকে এনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, আগামী নির্বাচনে তারা মনোনয়ন পাবেন না।
একই সঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে, এ নিয়ে যেন তারা কোনো ধরনের কোন্দল তৈরি না করেন। পরবর্তী সময়ে তাদের গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।
যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী এ-ও জানান, শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) ফজর নামাজের পর ২০টির মতো গোয়েন্দা ও জরিপ রিপোর্ট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন। আগেও তিনি ৬০ থেকে ৭০টির মতো রিপোর্ট দেখছেন।
এতে স্পষ্ট, মনোনয়ন নিয়ে খুব হিসাব করে পা ফেলছে আওয়ামী লীগ। আগে থেকেই সাবধান করে বলা হচ্ছে, বিদ্রোহ করলে আজীবনের জন্য আওয়ামী লীগের পদ হারাতে হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এমপি আছেন, এমন শতাধিক নেতার আমলনামা সুবিধাজনক নয়। তাদের মনোনয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেগেটিভ। বিষয়টি ইতোমধ্যে অনেককে জানিয়েও দিয়েছেন তিনি।
বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের মোট এমপি ২৭৫ জন। এর মধ্যে ২১৪ জন ভোটে নির্বাচিত পুরুষ। ১৯ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য এবং ৪২ জন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি।
চলমান সংসদে সব দল মিলে ১২২ জন নতুন এমপি ছিলেন। এর মধ্যে ৬৯ জন আওয়ামী লীগের। কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি, নতুনদের অনেকেই যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এরা মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছেন।
এ ছাড়া বার্ধক্য, অসুস্থ, দলের নেতাকর্মীদের বিরাগভাজন এবং এলাকায় যেতে পারেন না, এমন কিছু এমপিও বাদ পড়ছেন।
মনোনয়ন বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবরই বলে আসছেন, তারা উইনেবল ক্যান্ডিডেট খুঁজছেন। তিন মাস অন্তর জরিপ ও গোয়েন্দা রিপোর্ট হচ্ছে। এর ভিত্তিতেই উইনেবল প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও সংসদীয় দলের সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত এ যৌথসভায় সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন কঠিন হবে উল্লেখ করে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনে এবার দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে, তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। যদি কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়, তাহলে পূর্বে ছাড় পেলেও এবার তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।
সভায় আগামী নির্বাচনে প্রথমে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এরপর জোটের শরিকসহ অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত আসন বণ্টন করার কথা জানান শেখ হাসিনা।