সংলাপ থেকে কিছুই অর্জন হয়নি, আবার কিছুটা সফল হয়েছে—এমন দুই ধরনের আলোচনাই আছে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর মধ্যে। কারণ দলগুলো পুরোপুরি ‘ব্যর্থ’—এ কথা আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে রাজি নয়।
দলগুলো মনে করছে, সংলাপ চালিয়ে নেওয়া উচিত। অবশ্য এমন কথা সংলাপেও আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, তারা চাইলে আরো সংলাপ হতে পারে। যদিও বিএনপি ওই ‘পরবর্তী’সংলাপে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ শনিবার বিএনপির যৌথ সভা ডাকা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে স্টিয়ারিং কমিটির এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি সভাও। পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হবে।
জানা গেছে, দলটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করবে। দলটির নেতাদের মতে, তফসিল পেছানোর অর্থ হলো, সরকার আলোচনার ব্যাপারে আন্তরিক। পেছানো না হলে বিএনপিকে আন্দোলনের পথেই হাঁটতে হবে বলে দলের নেতারা মনে করেন। তাই পাশাপাশি আন্দোলনের প্রস্তুতিও অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
এদিকে ছোট একটি কমিটি গঠন করে দ্বিতীয় দফা সংলাপে আগ্রহের কথা জানিয়েছে ঐক্যফ্রন্টের দুই দল জেএসডি ও গণফোরাম। তবে শেষ পর্যন্ত ওই আলোচনা না হলে সংবিধানের মধ্যে থেকেই সমস্যা সমাধানে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সংলাপে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, আপনি সংবিধানসম্মত সমাধানে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এটাও আপনার অজানা নয় যে কোনো বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের দরকার পড়লে তা নিয়ে আলোচনা করাও সংবিধানসম্মত। কারণ সংবিধান সংশোধনের বিধান সংবিধানেরই অংশ। তবে বিরাজমান পরিস্থিতিতে সংকট থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধানসম্মত একাধিক পথ খোলা আছে বলে আমরা মনে করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ৭ দফার পাশাপাশি ১৩তম সংশোধনী মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের আলোকে, বিশেষ করে দশম ও একাদশ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে করা, নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি ছোট মন্ত্রিসভা গঠনসহ বিভিন্ন নির্দেশনা, ২০১৩ সালে বিরোধী দলকে নির্বাচনী মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদানে আপনার প্রস্তাবের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদের খ উপদফায় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। সুতরাং সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা সংবিধানসম্মত এবং তা ওয়েস্টমিনস্টার মডেলের সংসদীয় রীতি মেনে চলা বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অনুশীলনের সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ। বাংলাদেশেও ২০১৪ সালের নির্বাচনটি ছাড়া এর আগের ৯টি সংসদ নির্বাচন সংসদ ভেঙে দেওয়া অবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে গণপরিষদ ভেঙে দিয়েই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ না হলে স্যার (ড. কামাল হোসেন) নিজেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠাবেন, যাতে সংবিধানসম্মতভাবেই নির্বাচনকালীন সরকার কিভাবে করা যায় তার রূপরেখা থাকবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, দ্বিতীয় দফা আলোচনায় না যাওয়ার তো কোনো কারণ নেই।
তাঁর মতে, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ভদ্রতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি মনে করি, অর্জন কিছু হোক বা না হোক বরফ গলেছে। তা ছাড়া কিছু তো অর্জন হয়েছেই।
তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পরেও আলোচনা হতে পারে। শেখ হাসিনা থাকলে কিছু হবে না, আমি এতটা নিরাশাবাদী নই। জনগণকে মাঠে নামাতে পারলে অনেক কিছুই হতে পারে।
তবে ওই সংলাপে আবারও ঐক্যফ্রন্ট যোগ দেবে কি না তা নির্ভর করছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ওপর। দু-এক দিনের মধ্যে তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার আলোচনার সুযোগ কম। পাশাপাশি বিএনপির দলীয় ফোরাম তথা ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্তের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবারের দ্বিতীয় দফা সংলাপ প্রসঙ্গে আলোচনায় ‘তফসিল স্থগিত বা পেছানো’র প্রস্তাব দিয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তবে শেখ হাসিনা তা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার এখতিয়ার সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের।
এমন পরিস্থিতিতে তফসিল ঘোষণা করা হলে বিএনপি আবারও সংলাপে যেতে রাজি হবে কি না তা নিশ্চিত নয়। কারণ সংলাপের অর্জন প্রশ্নে দলটির মধ্যে নেতিবাচক আলোচনাই বেশি। খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার মূল দাবিগুলোই প্রধানমন্ত্রী এড়িয়ে গেছেন বলে মূল্যায়ন তাদের। আবার এত দিন নেতিবাচক অবস্থান স্পষ্ট করা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর সাড়ে তিন ঘণ্টার আলোচনাকেও এক ধরনের সফলতা হিসেবে দেখছে কেউ কেউ।