সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিহত হওয়ার ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম উচ্চারিত হওয়ায় যুবরাজের অবস্থান টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। তাকে নিয়ে দেশটির জনমত বিভক্ত।
অনেক সৌদি নাগরিকই মনে করছেন তিনি শেষ হয়ে হয়ে গেছেন বা তিনি খুবই বিপজ্জনক।
আবার অনেকে বলছেন, আমরা তাকে ভালোবাসি বা তিনি আমার হিরো।
জামাল খাসোগি হত্যা নিয়ে আরব দেশগুলো নতুন তত্ত্ব কাজ করছে। তত্ত্বটি এমন: খাসোগি সৌদি সরকারের কড়া সমালোচক ছিলেন এবং তাই যুবরাজ চেয়েছিলেন তার ব্যাপারে ‘কিছু একটা করা হোক’। তিনি কখনো খুনের অনুমতি দেননি। বরং তার অফিস যিনি চালান সেই সাউদ আল-কাহতানি এমবিএসের নির্দেশের বাইরে গিয়ে হত্যাকারীদের বলেছিলেন যে ‘যুবরাজ সবকিছুরই অনুমোদন দিয়েছেন।’
সৌদি এই তত্ত্ব আন্তর্জাতিক মহলে সামান্যমাত্রও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কারণ খুনের ঘটনা নিয়ে প্রথম থেকেই সৌদি আরবের দিক থেকে একেক বার একেক রকম কথা বলা হচ্ছিল। তাই এটাই অনুমান করে নেয়া যায় যে, প্রিন্স সালমান তার মোটা-বেতন-পাওয়া মিডিয়া উপদেষ্টাদের কথা কানে শুনলেও পাত্তা দেননি।
খাসোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ এখন বিশ্বজনমতের কাঠগড়ায়। পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে তার সঙ্গে কোনো সংস্রব আছে এটা আর তারা দেখাতে চাইছে না। অনেক পশ্চিমা সংস্থা এবং মার্কিন কংগ্রেসম্যান সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার দাবি করছে।
এসব নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের অন্দরমহলে চলছে নানা আলোচনা। সিনিয়র প্রিন্সরা মিলে মুহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা কিছু কমিয়ে দেবেন- যাতে এই বিক্ষুব্ধরা খুশি হয়? নাকি তাকে যুবরাজের পদ থেকে সরিয়ে দিবেন। নাকি তারা এই ঝড় কেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন?
বিবিসির সাংবাদিক ফ্রাংক গার্ডনার লিখছেন, সৌদি রাজপরিবারের অন্দরমহলে, বন্ধ দরজার ওপাশে এখন এ প্রশ্নগুলো নিয়ে ‘অত্যন্ত গুরুতর’ আলোচনা চলছে। এজন্যই বাদশাহ সালমানের একমাত্র জীবিত ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদেল আজিজ হঠাৎ করেই মঙ্গলবার রিয়াদে ফিরে এসেছেন।
তিনি এত দিন লন্ডনে ছিলেন, কারণ তিনি ছিলেন এমবিএসের বিরোধীদের মধ্যে ‘গুরুস্থানীয়’ একজন ব্যক্তি যিনি ইয়েমেনে যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, এবং এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী করেছিলেন যুবরাজ সালমান এবং তার বাবাকে। তার ভয় ছিল- দেশে ফিরলেই তাকে গৃহবন্দি করা হবে।
তিনি যখন বিমান থেকে রিয়াদে নামেন তখন প্রিন্স আহমেদ বিন আবদেল আজিজকে আগরবাতির ধোঁয়া এবং অন্য প্রিন্সদের উষ্ণ আলিঙ্গন দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। অভ্যর্থনাকারীদের মধ্যে এমবিএসও ছিলেন। প্রিন্স আহমেদ এখন চেষ্টা করছেন পুরো রাজপরিবারকে একসঙ্গে করতে।
তাই শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায় তা দেখার জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।