‘সৌদিতে বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থান কেবল সময়ের প্রশ্ন মাত্র’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সৌদি রাজা সালমান ও তার ছেলে সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধীকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থান কেবল সময়ের প্রশ্ন মাত্র বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল মালুফ।

মাত্র এক বছর আগে উত্তরাধিকারী যুবরাজের আসনে বসেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেতে চেয়েছিলেন তিনি। এজন্য সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে নির্মূলের পথ বেছে নেন যুবরাজ।

ক্ষমতায় বসে প্রথমেই তিনি অভিযান শুরু করেন রাজপরিবারে। ভবিষ্যতে যারা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন এমন সবাইকে তিনি মূলোৎপাটন শুরু করেন। পশ্চিমা শক্তিগুলোকে খুশি করতে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে রাজপরিবারের বহু সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। নিজের মাকেও গৃহবন্দী করে রাখেন বলে খবর প্রকাশিত হয়।

বিদেশে থাকা অন্যান্য প্রিন্সদের টার্গেট করেন তিনি। বিদেশ থেকে এ পর্যন্ত পাঁচজন যুবরাজ নিখোঁজ হয়েছেন; যাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা যুবরাজ খালিদ বিন ফারহান জানিয়েছেন, তাকেও এ পর্যন্ত ২১ বার প্রলোভন দেখানো হয়েছে। কখনো মিশরে সৌদি দূতাবাসে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে, আবার কখনো অন্য জায়গায়। তাকে অর্থসহায়তা দেয়ার লোভ দেখানো হয়েছে।

যুবরাজ ফারহান বলেন, আমি তাদের প্রলোভনে পা দেইনি। কারণ আমি জানতাম, তাদের প্রস্তাবে রাজি হলে আমার পরিণতি কী হতে পারে।

মাত্র এক বছর সময়ে মধ্যে সৌদি যুবরাজ রাজপরিবারের বহু সদস্যকে নিজের শত্রু বানিয়েছেন। ফলে রাজপরিবারে এখন তার বন্ধু চেয়ে শত্রু বেশি।

অন্যদিকে রাজপরিবারের সমালোচনা করায় সৌদি আরবে বহু আলেম ও মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়েছে। ফলে দেশের আলেম সমাজের একটি বড় অংশ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বাস্তাবে যুবরাজকে পছন্দ করেন না।

মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তারের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও যুবরাজ যথেষ্ট সমালোচিত। মানবাধিকার ইস্যুতে সম্প্রতি কানাডার সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের মারাত্বক অবনতি ঘটে।

অন্যদিকে প্রতিবেশি দেশ কাতারের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চাপিয়ে রাখা হয়েছে অবরোধ। কিন্তু ইরান ও তুরস্ক কাতারকে সর্বাত্মক সহায়তা করায় কাতারকে ঘায়েল করতে পারেননি যুবরাজ।

ইয়েমেন যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে যথেষ্ঠ সমালোচিত সৌদি যুবরাজ। ইয়েমেনে সৌদি জোটের যে অব্যহত হামলা তার জন্য যুবরাজ ও বাদশাহ দায়ী বলে যুক্তরাজ্যে মন্তব্য করেছিলেন বাদশহর ভাই আহমেদ বিন আবদুল আজিজ।

এসবের পরে সম্প্রতি তুরস্কে সৌদি দূতাবাসের ভিতরে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার পর ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় পড়েছে সৌদি রাজপরিবার। এতদিন যারা সৌদি যুবরাজকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে তারাও এখন বিপক্ষে অবস্থান নিতে বাধ্য হচ্ছে।

ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা কয়েকটি দেশ যুবরাজকে এখনো সমর্থন করলেও তারা বিকল্প উপায় রেখেছেন। জামাল খাশোগি হত্যার পর বাদশহর ভাই আহমেদ বিন আবদুল আজিজকে দেশে ফেরানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়ার পরই তিনি দেশে ফিরেছেন বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিন সালমানের এসব কর্মকাণ্ডের ফলে বর্তমানে রাজপরিবার, নিজের দেশ, প্রতিবেশি দেশ এবং আন্তর্জাতিক মহলসহ সব যায়গায় সমালোচিত। এখন তিনি যেখানেই পা রাখছেন সেখানেই বন্ধুর চেয়ে শত্রু বেশি।

এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল মালুফ সংবাদ সংস্থা আরটি নেটওয়ার্ককে বলেন, সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধুদের চেয়ে শত্রুই বেশি তৈরি করেছেন এমবিএস (যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান)।

তার মতে, সৌদির নেতৃস্থানীয়দের যুবরাজ বেজায় বিপর্যস্ত করে তুলেছেন। হাউজ অফ সৌদ বা সৌদি রাজপরিবারে এমবিএসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বেড়ে চলেছে। নিশ্চিতভাবেই তা ভাবা হচ্ছে (অভ্যুত্থান হবে)। কারণ, সৌদি যুবরাজ রাজসভার প্রচুর সংখ্যক সদস্যকে শত্রু বানিয়ে তুলেছেন। বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থান কেবল সময়ের প্রশ্ন মাত্র।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে