নামে ‘মধু’ থাকলে হবে কী, স্বভাবে একেবারে ‘গব্বর সিং’! হাসতে হাসতে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করতে পারে। সে গুলির যন্ত্রণা যখন টের পাবেন তখন বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। নিঃশব্দ ঘাতক ডায়াবেটিস এতটাই মারাত্মক! তবে ছোট থেকেই সচেতন হলে আটকে দেয়া যায় শরীরে মধুমেহর কারসাজি। ভরসা দিলেন এসএসকেএম হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
ওজন আর ভুঁড়ি দুই দায়ী: টাইপ টু ডায়াবেটিসের নানা কারণের মধ্যে অন্যতম বাড়তি ওজনের বোঝা। তার সঙ্গে যদি ভুঁড়ি বেড়েই চলে তাহলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহু গুণ বেড়ে যায়। ভাবছেন শরীরে চর্বি জমার সঙ্গে রক্তের শর্করা বেড়ে যাওয়ার কী সম্পর্ক! আসলে ওজন বাড়লে প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ইনসুলিনই যে আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়, তা সবারই জানা। ইনসুলিন কমে গেলে ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
বংশে থাকলে নিয়মিত চেক আপ করাতেই হবে: বাবা-মা অথবা দাদু-দাদি পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে রোগের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই যাদের বংশে এই অসুখের ইতিহাস আছে, তাদের উচিত ওজন স্বাভাবিক রাখা ও নিয়মিত শরীরচর্চা করা। আর কোনো সমস্যা থাকুক না থাকুক বছরে একবার অন্তত রক্ত পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়।
ছোট থেকেই সচেতন হতে শেখান:ডায়াবেটিস আটকানোর পাঠ শুরু করা দরকার শৈশবেই। ব্রাশ করা কিংবা স্নান করার মতোই ছোট থেকে নিয়ম করে গা ঘামিয়ে খেলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে স্কুলের সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মাকেও দায়িত্ব নিতে হবে। ‘অল ওয়ার্ক অ্যান্ড নো প্লে’ প্রকৃত অর্থেই একজন বাচ্চাকে ‘ডাল’ করে তোলে। কেননা, সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচদিন দৌড়াদৌড়ি করে খেললে একদিকে কার্ডিওরেসপিরেটরি ফিটনেস বাড়ে, অন্যদিকে মস্তিষ্কেও রক্তচলাচল বাড়ে বলে ক্ষিপ্রতা এবং বুদ্ধিও বাড়ে। খাবারদাবারের ব্যাপারেও মায়েদের সচেতন হতে হবে। শিশু যখন শক্ত খাবার খেতে শুরু করে, তখন থেকেই তাদের পুষ্টিকর খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। নিজেদের সুবিধার জন্য কেক, বিস্কুট, ইনস্ট্যান্ট নুডলসহ অন্য ফাস্ট ফুডের অভ্যেস গড়ে তুলবেন না। পরিবর্তে টাটকা ফল, সবজি, রুটিসহ বাড়িতে তৈরি খাবার দিন। চিনি, মিষ্টি, ভাজাভুজিতে অভ্যস্ত করে তুলবেন না। সঙ্গে নিজেদের খাবার অভ্যাসও বদলান।
ওজন ঠিক রাখতে হবে ছোট থেকেই:বংশে থাকুক বা না থাকুক ওজন বাড়লে টাইপ টু ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশারসহ মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ওজন স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে শৈশবেই। ওজন ঠিক রাখতে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার তো খেতে হবে। সঙ্গে নিয়ম করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন মোট ১৫০ মিনিট হাঁটতে হবে। তাহলে আর ডায়াবেটিসকে জীবন থেকে সরাতে সময় লাগবে না।