সদ্য নিবন্ধন বাতিল হওয়া ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আসন নিয়ে আপস ও সমঝোতা হলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২৩ দলীয় জোটে থেকে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নেয়ার বিষয়টি ২-৩ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে জামায়াত।
জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, দল ও জোটের সিদ্ধান্তে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা। শুধু প্রতীকের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিচ্ছেন। দু-একদিনের মধ্যে দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামের বৈঠক হবে। সেখানেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
জামায়াতের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় জামায়াতের অনেক নেতা এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন। দর কষাকষির কৌশলে বিএনপিসহ জোটের কাছ থেকে কমপক্ষে ৬০টি আসন চান তারা।
তবে বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সমঝোতা হলে এবার জামায়াতকে ২০ থেকে ২৫টি আসন ছেড়ে দেয়া হতে পারে। যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের ৩৫টি আসন দেয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও থেকে একটি, দিনাজপুরে তিনটি, লালমনিরহাটে একটি, কুড়িগ্রামে একটি, বগুড়ায় তিনটি, গাইবান্ধায় তিনটি, নীলফামারীতে দুটি, জয়পুরহাটে দুটি, নওগাঁয় একটি, রাজশাহীতে একটি, পাবনায় দুটি, কুষ্টিয়ায় একটি, ঝিনাইদহে একটি, খুলনায় দুটি, সাতক্ষীরায় তিনটি, বরগুনায় একটি, বাগেরহাটে দুটি, পটুয়াখালীতে একটি, ময়মনসিংহে একটি, শেরপুরে একটি, ঢাকায় একটি, যশোরে তিনটি, চট্টগামে তিনটি, সিলেটে দুটি, কুমিল্লায় একটি, ফেনীতে একটি, লক্ষ্মীপুরে দুটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি, সিরাজগঞ্জে দুটি, নাটোরে দুটি, কক্সবাজারে দুটি, চুয়াডাঙ্গায় দুটি এবং মেহেরপুরের একটি আসন থেকে মনোনয়ন ফরম তোলা হয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা রাখায় জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারিয়েছে। এ অবস্থায় দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন।
গত মঙ্গলবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানের জন্য ঢাকা-১৫ (মিরপুর-কাফরুল) আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কেনা হয়। ওইদিন বিকেলে ঢাকা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তার পক্ষে মনোনয়ন নেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তসলিমসহ কয়েকজন নেতা।
এ ব্যাপারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শফিকুর রহমানকে এ আসনে প্রার্থী হতে অনুরোধ করা হয়েছে। শফিকুর রহমান জামায়েতের পক্ষ থেকে জোটের লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান, তাই দল ও জোটের মধ্যে সমন্বয় রক্ষার জন্য তার ঢাকায় অবস্থান প্রয়োজন।
এর আগে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো এক চিঠিতে ২০ দলীয় জোটের শরিক ৮ দলকে ‘ধানের শীষ’প্রতীক বরাদ্দ দিতে বলে বিএনপি।
চিঠিতে বলা হয়, মনোনয়ন চূড়ান্ত করার সময়সীমার মধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনে জোটগত মনোনীত প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দের জন্য লিখিতভাবে অবহিত করা হবে।
তবে গত ১০ নভেম্বর জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনী বৈঠক শেষে জামায়াত নেতা আব্দুল হালিম নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রতীকের ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানান।
প্রসঙ্গত, পুনঃতফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর।