বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হাইকোর্টে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।
এটির পাশাপাশি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার দণ্ড স্থগিত হলেই কেবল তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল আবেদনটি দায়ের করেন বিএনপি নেত্রীর আইনজীবী নওশাদ জমির। গত ২৯ অক্টোবর এই মামলায় সাজা ঘোষণা হয়। গত বৃহস্পতিবার রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই দিন পর আপিল করা হলো।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার দণ্ড স্থগিতাদেশের উপর নির্ভর করছে খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছেন তার আইনজীবীরা। এ কারণে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর দ্রুততম সময়েই করা হলো আপিল।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাতেও দণ্ড স্থগিতের আবেদন করার কথা রয়েছে বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীদের। এই মামলায় পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়ায় চেম্বার জজ আদালতে আবেদনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৬৩৮ পৃষ্ঠার মূল রায়সহ প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার আপিল জমা দেয়া হয়েছে। সঙ্গে আছে জামিনের আবেদনও।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, এই মামলায় অবৈধ ও অন্যায়ভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেল জরিমানা করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আপিল করে সাজা বাতিল ও খলাস চাওয়া হয়েছে। হাই কোর্টে কোনো একটি বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে।
খালেদার আপিল হাই কোর্টে জমা পড়ার পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, যে আদালতেই শুনানি হোক, আপিল মোকাবেলায় দুদক প্রস্তুত।
গত ২৯ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন। কারাদণ্ড ছাড়াও তিনি ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করেন। একই সাজা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
হারিছ চৌধুরী শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। অপর দুই আসামি দীর্ঘদিন জামিনে থাকলেও রায় ঘোষণার আগে মুন্না ও মনিরুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
চারজনের বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণার পাশাপাশি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকায় খালেদা জিয়ার নামে কাকরাইলে কেনা ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন আদালত।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়। এ ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলাটি করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। তবে ৩০ নভেম্বর উচ্চ আদালত দণ্ড বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে।
এই দুটি দণ্ডের কারণে খালেদা জিয়ার ভোটে দাঁড়ানোর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দুই বছরের সাজা হলে দণ্ড ভোগের পরের পাঁচ বছর ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই।
অবশ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দণ্ড স্থগিত হলে ভোটে আসার সুযোগ আছে। আর বিএনপির আইনজীবীরা চেষ্টা করছেন দুই মামলায় দণ্ড স্থগিত করানোর।
এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার পক্ষে ফেনী-১, বগুড়া-৬ এবং বগুড়া-৭ আসনের জন্য দলের মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে। অবশ্য তার বিকল্পও রাখা হয়েছে।