ঘুষের মামলায় নাজমুল হুদাকে আত্মসমর্পণ করতেই হবে

ডেস্ক রিপোর্ট

সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার মামলায় ৪ বছর কারাদণ্ড দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে ৬৭ পৃষ্ঠার রায়টি প্রকাশ পায়। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করা হলে তা জাতীয় স্বার্থ, অর্থনীতি ও দেশের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

universel cardiac hospital

২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার মামলায় ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট নাজমুল হুদাকে ৭ বছর ও তার স্ত্রী সিগমা হুদাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২০ মার্চ হাইকোর্ট তাদের খালাস দেন।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। আপিল বিভাগ ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় বিচার করার নির্দেশ দেন। পুনঃশুনানি শেষে গত বছরের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে নাজমুল হুদাকে চার বছর কারাদণ্ড ও সিগমা হুদাকে তার কারাভোগ কালকে সাজা হিসেবে ঘোষণা করেন।

রায়ের কপি পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে আদালত তাকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু নাজমুল হুদা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিট করেন। রিটটি গত বছরের ১০ ডিসেম্বর খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

এরপর তিনি আত্মসমর্পণ ছাড়াই আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। এ বছরের ৭ জানুয়ারি সেই আবেদনও খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে এ মামলায় নিম্ন আদালতে নাজমুল হুদাকে আত্মসমর্পণ করতেই হচ্ছে।

বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের দেয়া রায়ে বলা হয়- দুর্নীতি একটি অভিশাপ। সমাজের সবক্ষেত্রে দুর্নীতি দেখা যায়। দুর্নীতি সমাজের নৈতিক অবস্থা নষ্ট করে এবং সরকারি কর্মচারীর দুর্নীতি কেবল নৈতিক অবস্থাই নষ্ট করে না বরং এটি জাতীয় অর্থনীতি ও জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। সরকারের উচ্চপর্যায়ে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করা হলে তা জাতীয় স্বার্থ, অর্থনীতি ও দেশের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

আদালত বলেন, আপিলের কোনো সারবত্তা পাওয়া যায়নি। আপিল খারিজ করা হল। বাকি সাজা ভোগ করতে বিচারিক আদালতের রায়ের কপি গ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যে আপিলকারী (নাজমুল হুদা) বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। এতে ব্যর্থ হলে বিচারিক আদালত তার গ্রেফতার নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে ২০০৭-০৮ সালে (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়) তিনটি মামলা হয়। একটি জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে।

দ্বিতীয়টি এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা হিসেবে ৬ লাখ টাকা অবৈধভাবে নেয়ার অভিযোগে।

তৃতীয়টি আকতার হোসেন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর জাহির হোসেনের কাছ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে। প্রথম মামলাটিতে নাজমুল হুদাকে ১২ বছর সাজা দেন নিম্ন আদালত। আপিলে হাইকোর্ট প্রথম মামলাটি খারিজ করে তাকে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেন। দ্বিতীয় মামলাটির কার্যক্রম আদালতের আদেশে বন্ধ আছে।

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিভিন্ন মেয়াদে খাদ্য, তথ্য এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কার আদেশের পরও বিএনপির পরিচয়েই রাজনীতিতে থাকার চেষ্টা করেন। অবশেষে ২০১২ সালে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন।

এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স (বিএনএ), বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) এবং সর্বশেষ ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন। সম্প্রতি এ দলটিকে নিবন্ধন দিতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে