নির্বাচনে আ.লীগের ৩ চ্যালেঞ্জ

বিশেষ প্রতিনিধি

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে এই নির্বাচনের সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। তারা প্রার্থী মনোনয়নের কাজও চূড়ান্ত করছে।

এসব প্রক্রিয়ায় এগিয়ে অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটের শরিকদের জন্য শতাধিক আসনে ছাড়ের বিষয়টি তারা প্রায়ই চূড়ান্ত করেছে। নিজ দলের প্রার্থীদের তালিকাও এক রকম চূড়ান্ত।

universel cardiac hospital

তবে ভোটের লড়াইয়ে এবার ক্ষমতাসীন মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ড।

তারা এ-ও বলছেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফল হলে, তবেই না নৌকা ফের সংসদে ভিড়বে। না হয় ছিটকে পড়তে হবে।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রায় সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বিএনপির প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করে এবং জোটের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে সব আসনের প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে। এক্ষেত্রে জোটের শরিকদের জন্য সর্বশেষ ৭০-৮০টি আসনে ছাড় দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে ক্ষমতাসীনরা।

অবশ্য রাজনৈতিক বোদ্ধারাও বলছেন, সারা দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, এই ইতিবাচক প্রচারণা ও নিজেদের সামনের তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে ফের ক্ষমতায় আসতে পাবে আওয়ামী লীগ। নতুনা উন্নয়নের ফসল ঘরে তুলবে বিরোধী শিবির।

১. নিজ দলের কোন্দল মেটানো
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ জেলার সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক। দলের ভেতরেই তৈরি হয়েছে ‘এমপিলীগ’ ও নানা ভাই গ্রুপ। অনৈক্য আর বিভাজনে বেহাল দশা তৃণমূলে। বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন এমপিকে নিজ দলের পক্ষ থেকেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি এমপির গাড়িবহরেও দলীয় কর্মীরা হামলা করেছে। দলের এ চরম কোন্দল মিটিয়ে ক্ষমতাসীন এমপিকে ভোটের মাঠে লড়াই করতে হবে।

২. বিরোধীদের বৈরিতা মোকাবেলা
বিগত ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি কমেছে। অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা দানা বেধেছে। বিপরীতে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী শিবিরের লোকেরা সরকারের বিভিন্ন মামলা-হামলায় অতিষ্ট হয়ে নিজেদের ঐক্য দৃঢ় করেছেন। বিএনপির-জামায়াতের নেতৃত্বে এই নির্যাতিত গোষ্ঠী এক হয়ে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করবে। এটি মোকাবেলায় সক্ষম হতে হবে ক্ষমতাসীন জোটের প্রার্থীকে।

৩. মান-অভিমান ও ক্ষোভ নিরসন
ক্ষমতাসীন হওয়ায় সরকারি সুবিধা পেয়েছে আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরই ফলে নানা গ্রুপের বাইরেও ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিভাজন। দিনে দিনে এই মান-অভিমান জমে ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি থেকে তৈরি এ ক্ষোভ বা অবমূল্যায়নের অভিমান নিরসন করেই এগোতে হবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে।

এ ছাড়া নানা সমস্যা মোকাবেলা করে জয়ের বন্দরে নৌকাকে ভিড়াতে হবে। তবে এটির জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক নেতা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সারা দেশে যে উন্নয়ন করেছি, তাতে আমাদের ভোট না দেয়ার কোনো কারণ দেখছি না। আমাদের বিশ্বাস, উন্নয়নের স্বার্থেই মানুষ নৌকাকে বেছে নেবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা দ্বন্দ্ব মিটিয়ে জিতে আসতে পারবেন, এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আদর্শিক জায়গা ঠিক থাকলে এ ধরনের প্রতিযোগিতা বড় কোনো সঙ্কট নয়। যেখানে গণতন্ত্র আছে, রাজনীতির চর্চা আছে, সেখানে নেতার বিকাশ ঘটবেই। যার প্রতিফলন প্রার্থীর এই ব্যাপকতা। তবে আমাদের মনোনয়নের পর সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়নের প্রতীক নৌকার জন্য কাজ করবে।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে