শনিবার বিকেলে আনা হচ্ছে সৈয়দ আশরাফের মরদেহ

বিশেষ প্রতিনিধি

আগামীকাল শনিবার দেশের মাটিতে ফিরে আসবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ।

বৃহস্পতিবার রাতে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একান্ত সচিব এ কে এম সাজ্জাদ হোসেন শাহীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, আগামী শনিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ দেশে আনা হবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ আশরাফ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই সৈয়দ আশরাফ প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। এ অবস্থাতেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন সৈয়দ আশরাফ।

একাদশ জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত এমপিদের মধ্যে ২৮৯ জন শপথ নিয়েছেন বৃহস্পতিবার। অসুস্থতার কারণে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এদিন শপথ নিতে পারেননি। তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পর তার শপথ নেয়ার কথা ছিল।

আশরাফের মৃত্যুতে শোকের ছায়া :
এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

একই সঙ্গে শোক প্রকাশ করেছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য রাজনীতিবিদরা।

রাষ্ট্রপতি এক শোকবার্তায় বলেন, জনপ্রিয় এই রাজনীতিবিদের মৃত্যু জাতির জন্য একটি বড় ক্ষতি। গণতন্ত্র, রাজনীতি ও সমাজ উন্নয়নে তার অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন মহৎ-প্রাণ, সৎ, নীতিবান, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারালো। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হারিয়েছে একজন আদর্শবান-ত্যাগী-নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির অগ্রযাত্রা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অভিযাত্রায় ইতিহাসের ধ্রুবতারা হয়ে বেঁচে থাকবেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সুযোগ্য পুত্র একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও কীর্তিগাঁথা গৌরবময় নেতৃত্ব চির অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে এ শোকবার্তা পাঠান।

এছাড়াও তুখোড় এই নেতার মৃত্যুতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও শোক প্রকাশ করেছেন।

মত ও পথ সম্পাদক র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ একজন বিশ্বস্ত ও ত্যাগী নেতা হারালো। এ ক্ষতি পূরণ হবার নয়।

আশরাফের মৃত্যুতে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান।

তিনি বলেন, শোক বার্তায় ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে বাংলাদেশে একজন সজ্জন রাজনীতিকের অনুপস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।

শায়রুল কবির খান বলেন, বাংলাদেশের সুস্থধারার দুই রাজনীতিক মির্জা ফখরুল ও সৈয়দ আশরাফ ২০১৪ সালে রাজনৈতিক সংকটে ভূমিকা রেখেছিলেন। আজকে তাদের একজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শূন্যতা সৃষ্টি হলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন সৈয়দ আশরাফ।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে