দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে : শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি

সংসদ নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতাকে কেউ ব্যক্তিগত ক্ষমতা কিংবা সম্পদ অর্জনের হাতিয়ার বানাবেন না।

তিনি আরও বলেন, জনগণ সঙ্গে থাকলে কেউ আমাদের রুখতে পারবে না। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকবেন।

universel cardiac hospital

তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকবেন। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, এখানে ক্ষমতাকে কেউ ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করবেন না। আমরা আজকে আছি কিন্তু ক্ষমতা কোনোভাবেই চিরস্থায়ী নয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা আমাকে সংসদীয় দলের নেতা বানিয়েছেন এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তবে এটাই যেন শেষ হয়!

এ সময় সংসদ সদস্যরা সমস্বরে নো নো বলে ওঠেন।তারা বলেন, আপনি যতদিন আছেন আপনিই আমাদের সংসদীয় দলের নেতা, দলের নেতা, বাংলাদেশের নেতা এবং আমাদের অভিভাবক আপনি।

’৭৫ সাল পরবর্তী সময়ে প্রবাস জীবনের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি জার্মান গেলাম, ওখান থেকে ভারত আসলাম, সেখানে মিসেস গান্ধী আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।

তখন আমাদের দল বলতে কিছুই ছিল না, তারপর আমি লন্ডন গিয়েছি, সেখান থেকে আস্তে আস্তে দল গোছাতে শুরু করি। লন্ডনে থাকাকালীন টাকার অভাবে জয়ের সেমিস্টার ড্রপও করতে হয়েছিল, আবার টাকা জোগাড় করে সেমিস্টার শুরু করতে হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সেই দিন আর নেই।

তিনি বলেন, আজকে দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে।

সংসদ সদস্যদের পার্লামেন্টের কার্যপ্রণালী বিধি ভালোভাবে জানার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ১৫ দিন পর অধিবেশন বসবে, সবাই ভালো করে প্রস্তুতি নেবেন। সংসদ লাইব্রেরিতে যাবেন, সেখানে বসে লেখাপড়া করবেন।

তিনি বলেন, এখন আর কেউ ঢাকায় বসে থাকার দরকার নেই। শপথ হয়ে গেছে। সবাই এলাকায় গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেন, দেখা করেন। জনগণ আপনাদের বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। ফলে জনগণের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সভা শেষে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও জননন্দিত নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে টানা তিনবার সংসদ নেতা হয়ে তিনি রেকর্ড গড়লেন। সংসদ নেতা নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি পরপর তিনবার এবং চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদও তিনি অলঙ্কৃত করতে যাচ্ছেন। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পাশাপাশি সুশাসন, উন্নয়ন এবং সংসদীয় রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা যেন নিজেই নিজেকে অসীম দৃঢ়তায় প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়ে হাল ধরেন শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরপরবর্তী সময়ে সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি।

হাল ধরেন আওয়ামী লীগের। মানুষের মুক্তি আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার বিরামহীন পথচলা শুরু হয়। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের মধ্য জুনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তিনি সংসদ নেতা নির্বাচিত হন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাই প্রথম নিজ দলের বাইরে অন্যদল থেকে মন্ত্রী বানিয়ে দেশে ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষমতার প্রথম পাঁচ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিরোধী দলে বসতে হয়।

যদিও ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অন্য দলের চাইতে ভোট বেশি পায়। এরপর ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নতুন করে তার আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়। আর এ আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে ২০০৮ সাল, ২০১৪ সাল ২০১৮ সালে টানা তৃতীয় মেয়াদে তিনি সংসদ নেতা নির্বাচিত হন।

বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করেন। এর মাধ্যমে তিনি চতুর্থবারের মতো সংসদ নেতা নির্বাচিত হন।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে